রবীন্দ্রনাথ
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার স্থির করতে হবে
লাদেশের জনগণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার পরও এরা বাংলাদেশের স্বতন্ত্র জাতীয় সংস্কৃতির কথা ভাবতে পারেন না। তাদের দৃষ্টি অতীতমুখী, বাংলাদেশের লেখক, শিল্পী, রাজনীতিবিদদের অপর একটি অংশে দেখতে পাই ভারতের সংস্কৃতির বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির প্রতি ভীষণ বিরূপ মনোভাব। এরা বাংলাদেশের জনগণের সংস্কৃতির উৎস খুঁজেন মধ্য যুগের মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিতে বিশেষ করে ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে। এরা বাংলার ইতিহাসে বখতিয়ার খিলজির লক্ষণাবতি ও গৌড় জয়ের আগে যেতে চান না। আরবে ইসলাম প্রচার থেকে আরম্ভ করে বাংলার তুর্কি, পাঠান, মোগল শাসকদের শাসনকাল অতিক্রম করে ওহাবি ও ফরাজি আন্দোলনের ধারা ধরে দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে আসেন। তারা জোর দেন দ্বিজাতিতত্ত্বে। এই সেদিন, মনে হয় ২০০৪ সালে, বখতিয়ার খিলজির লক্ষণাবতি জয়ের আটশ বছর পূর্তি উপলক্ষে একদল বুদ্ধিজীবী সতেরটি ঘোড়া নিয়ে পল্টন ময়দানে সমবেত হয়ে অনুষ্ঠান করেছেন এবং প্রচার মাধ্যমে তা বিপুল প্রচার লাভ করেছে। বাংলাদেশের লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ রবীন্দ্রভক্ত এবং অপর একটি অংশ নজরুলভক্ত।
রবীন্দ্রনাথ সূর্যের মতো বিকিরণ করছেন আলো
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকীতে গভীরভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছি। আজ আমি পাকিস্তান পিরিয়ডে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতার বিষয়ে বলতে চাই। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও রবীন্দ্রনাথবিরোধীরা জাগ্রত আছে। তাই এই নতুন প্রজন্মকে সেই ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট জানতে হবে।
বাংলাদেশের কাম্যতম বহুভাষী শিক্ষা
প্রতিটি ভাষা পৃথকভাবে জীবন ও জগৎকে ধারণ ও বর্ণনা করে থাকে- ত্রিশের দশকে স্যাপির-হোর্ফ হাইপথিসিসে এমনটা দাবি করা হয়েছে। এই দাবি যদি সত্য হয়, তবে বহুভাষী শিক্ষা একভাষী শিক্ষার তুলনায় কার্যকর ও সম্পূর্ণতর হবার কথা। বহুভাষী শিক্ষা ১) স্বাভাবিক (Natural/Organic) হতে পারে এবং ২) কৃত্রিম হতে পারে (Artificial)। রোমান আমলে (খ্রিষ্টপূর্ব ১ম থেকে ৫ম শতক) ল্যাটিন ভাষা-ভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা ছিল একটি স্বাভাবিক বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা (Natural/Organic Multilanguage Education), কারণ ল্যাটিন তখনও একটি জীবিত ভাষা। মধ্যযুগের দ্বিতীয় পর্বে (১০০০ থেকে ১৫০০) ল্যাটিন ভাষা-ভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা ছিল একটি কৃত্রিম বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা (Artificial/Imposed Multilanguage Education), কারণ ল্যাটিন তখন একটি মৃত ভাষা। আমার দাবি, স্বাভাবিক বহুভাষী শিক্ষা ব্যবস্থা যতটা সর্বজনীন ও কার্যকর শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, কৃত্রিম বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা এই দুই কর্তব্য পালনে ততটাই ব্যর্থ হবার কথা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষাব্যবস্থা হবে একটি স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা, কারণ বাংলা সর্বসাধারণের মুখের ভাষা।