রায়হান আহমেদ তপাদার
গাজা যুদ্ধ শেষে যে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্ম হবে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই বিভক্তির খবর এত দিন পর্যন্ত একরকম পর্দার আড়ালেই ছিল। মাঝে মধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছিল যে, গাজায় বেসামরিক জনগণের বিপুল প্রাণহানির কারণে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ দুই মিত্রের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। তা ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, বিশ্বের বৃহৎ অংশের সমর্থন এখনো ইসরায়েলের পক্ষে। তবে বাইডেন বলেছেন, গাজায় বেপরোয়া বোমাবর্ষণের কারণে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি সমর্থন দ্রুত কমছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি সরকারও দুই দেশভিত্তিক সমাধান চায় না। আর কয়েক সপ্তাহ পর গাজা-সংকট পঞ্চম মাসে পা দিতে চলেছে।
বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের বেড়াজালে ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর
দুই বছর আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধ এখনো চলছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো বিশ্বাস করেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে জিততে পারবেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের নতুন মূল্যায়নে এ কথা বলা হয়েছে। এই দুই বছরের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধে ইউক্রেনকে পরাজিত করার, ইউক্রেনে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এখনো করে চলছেন পুতিন। বরং রুশ প্রেসিডেন্টকে এক বছর আগের তুলনায় এখন এই যুদ্ধজয় নিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি আশাবাদী বলে মনে হয়। পুতিনের এমন আশাবাদের পেছনে রয়েছে ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা বিল পাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা, রণক্ষেত্রে কিয়েভের সীমিত সাফল্য, সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার দখলের মতো বিষয়। আভদিভকার নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনী নেয়ার পর পুতিন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক পদক্ষেপের পেছনে কৌশলটা কী?
লোহিত সাগরে হুতিরা বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ করেছে। হুতিরা দাবি করেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এটা করছে; কিন্তু এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই যে হুতিরা আরব বিশ্বে বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে জাহাজে হামলার মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের ভেতরে তাদের ক্ষয়ে যাওয়া সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। সুয়েজ খাল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৮টি জাহাজ চলাচল করে। বিশ্বের মোট বাণিজ্যিক পণ্যের ১২ শতাংশ পরিবহন হয় এই পথ দিয়ে। সে কারণেই দুই মাস ধরে লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীরা বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে যে হামলা চালিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে সেটা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ইয়েমেনে হুতি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ধারণাটিই সবচেয়ে প্রবল; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এই সামরিক পদক্ষেপের পেছনে কৌশলটা কী? এর মধ্য দিয়ে কি জাহাজে হামলা থামানো যাবে?
ইরানকে নিয়ে পশ্চিমাদের যত মাথাব্যথা
মধ্যপ্রাচ্য হয়ে জ্বালানি ও পণ্য পরিবহনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ জলপথ লোহিত সাগরের বাব এল মান্দেব প্রণালি। ইয়েমেনের হুতিরা সেখানে ইসরায়েল ও পশ্চিমা মালিকানাধীন বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে মুসলিম বিশ্বের জনতার কাছে তুমুল সমর্থন ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইরান সমর্থিত হুতিদের বিরুদ্ধে এখন বিমান হামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হুতিরাও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ ইয়েমেনি জড়ো হয়ে এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। সমবেত জনতা ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। হুতি নেতারা জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ নাহলে-লোহিত সাগরে তারা হামলা অব্যাহত রাখবেন। কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগই তাদের দমাতে পারবে না। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদের পক্ষে ইরানের প্রক্সি হিজবুল্লাহর সদস্যদের সঙ্গেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে বিপ্লবী গার্ডের সদস্যরা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বিপ্লবী গার্ডের অনেক লুকানো এজেন্ট। তাদের সক্রিয় করে এসব দেশে অবস্থানরত মার্কিন সেনা, কূটনীতিক ও নাগরিকদের হত্যা করতে পারে তেহরান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকাতেও স্লিপার সেল রয়েছে ইরানের। তেহরান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই যারা সক্রিয় হয়ে নাটকীয়ভাবে সহিংস হামলা চালাবে।
ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগে আইসিজের রায় মানতে কতটা বাধ্য?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসিদের হাতে ইহুদি নিধনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে গণহত্যা কনভেনশন প্রণয়ন করা হয়। সেই কনভেনশন অনুযায়ী কোনো জাতিগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে ঘটানো কর্মকাণ্ডই গণহত্যা। আইসিজে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিলেও এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এ আদালত যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ওই রায় মানতে বাধ্য করার ক্ষমতা নেই আদালতটির। যদিও ইসরায়েল গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় আইসিজের আদেশ মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদারে আগ্রহ দেখিয়েছে ইইউ
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক কালে এ আগ্রহের কথা জানান ইউরোপীয় কমিশনাররা।
লোহিত সাগরের সংকট বাংলাদেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে
বিশ্বব্যাপী দৈনিক জ্বালানি তেল পরিবহনের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয় লোহিত সাগর দিয়ে। এখান দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়াকে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের ব্যাঘাত হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সবচেয়ে সহজ পথ আরব সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সংযোগকারী এডেন উপসাগর-লোহিত সাগর-সুয়েজ খাল। এই পথে ইয়েমেন থেকে জাহাজে হামলা চালাচ্ছেন হুতি বিদ্রোহীরা। এই বিপদ এড়াতে বিশ্বের বড় শিপিং কোম্পানিগুলো আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ঘুরপথে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। এতে এশিয়া থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে পণ্য পরিবহনে দুই সপ্তাহ বেশি সময় লাগছে। তাই শিপিং কোম্পানিগুলো এ জন্য বাড়তি খরচ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শিপিং কোম্পানিগুলোর বাড়তি মাশুল আরোপের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। কারণ, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই পরিবহন হয় এই পথে। অবশ্য আমদানি পণ্যের এক-দশমাংশ আনা হয় এই পথ ব্যবহার করে।
লোহিত সাগরের বাণিজ্যিক জাহাজে কেন হুতি বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালাচ্ছে?
গেল বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হুতিরা লোহিত সাগরে জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করতে এবং বিপদে পড়া বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধারে সহযোগিতা করার কাজে সবচেয়ে সেরা যুদ্ধজাহাজ পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশরাও এ জন্য তাদের সেরা যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। যাই হোক, পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন হুতির সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করেছে। হুতি বিদ্রোহীরা যেভাবে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে, তাতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র-উভয় দেশের মধ্যেই সংশয় তৈরি হয়, এ ধরনের হামলা ঠেকাতে তাদের যুদ্ধজাহাজগুলো কতটা কুলিয়ে উঠবে।