সায়মন মহসিন
ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ এখনই নয়
দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলের আক্রমণে ইরানের দুজন জেনারেল ও অন্য পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকতার নিহতের ঘটনার পর, ইরানও সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ করেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইরান ইসরায়েলের ওপর তেমন বড় কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। তবে কেউ আঘাত করলে ইরান যে সরাসরি প্রতিউত্তর দিতে পিছপা হবে না, সেটা যেই হোক না কেন, তা ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং এমনকি জর্ডানও ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরায়েলের সহায়তায় এগিয়ে আসে। ইরানের ছোড়া মিসাইল এক বিশাল অংশ তারা সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানের আকাশপথেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিলতা: উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ
সহাবস্থান: উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের পর্বতভূমিতে অবস্থিত চিন রাজ্যটি। সেখানে বসবাসকারী চিন জনগোষ্ঠীর নামে রাজ্যটির নামকরণ করা হয়েছে। এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী কুকি ও মিজো সম্প্রদায় চিন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ। ভারতের মিজোরাম প্রদেশের সঙ্গে চিন রাজ্যটির সীমান্ত ভাগ হয়েছে। মিজোরামে বাস করে মূলত মিজোরা। বাংলাদেশের রাঙামাটি, বান্দরবানের সঙ্গেও চিন রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। এই দুটি জেলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কুকি-চিন সম্প্রদায় বাস করে। তাই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে, মিজোরামে এবং মিয়ানমারে বিপুলসংখ্যক কুকি সম্প্রদায় ছড়িয়ে পড়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাত বিদ্যমান, মিজোরাম এবং মিয়ানমারেরও নিজেদের সমস্যা রয়েছে, এর মধ্যে কুকি-চিন সেখানে বাড়তি এক সমস্যা নিয়ে এসেছে।
কক্সবাজারে চোরাচালান স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের জন্য হুমকি
কয়েক সপ্তাহ আগে কক্সবাজারের নিরাপত্তা বাহিনী তিন ব্যক্তিকে কিছু খাদ্য পণ্যসহ আটক করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে ভোজ্যতেল, চিনি এবং মসলা। যেগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে পাঠানোর কথা ছিল। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি রমজান মাসে পণ্য মজুদ ও মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুদ ও কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি কোনো নতুন ঘটনা নয়, রমজান মাসে মূল্য আরও বাড়ে। রমজান এলেই মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে থাকে, কখন কোন পণ্যের মূল্য বাড়ে, তা নিয়ে। এর মধ্যে এখন বাড়ছে চোরাচালানের শঙ্কা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রাপ্ত তথ্য মতে, সাম্প্রতিককালে চোরাচালান উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মাধ্যমে মিয়ানমারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল এবং খাদ্যপণ্যের পাচার হচ্ছে। তবে, কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাচার রোধে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
পেশাগত দক্ষতায় আমাদের ইংরেজি জানাটা কতটা জরুরি
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭ হাজার ভাষায় কথা বলা হয়। ভাষাগুলোর মধ্যে কিছু মিল থাকলেও প্রত্যেক ভাষার মূল পরস্পর থেকে একেবারে ভিন্ন। ভাষাগুলোর গঠন এবং এর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ভিন্নতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। ভাষাবিদদের মতে, একটি ভাষা কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা বোঝার মধ্য দিয়ে মানবজাতিতে কীভাবে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ, সম্পর্ক ও ভাবের আদান-প্রদানের বিবর্তন হয়েছে, তাও বোঝা যায়। কথা বলার ভঙ্গি, ভাষার বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি গবেষণার মাধ্যমে মানুষের আচরণ ও কোন কোন বিষয় তাদের ক্রয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটাও নির্ণয় করা সম্ভব। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষার পর্যালোচনা করে ব্যবহারকারীদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোও নির্ণয় করা সম্ভব।
পাকিস্তান নির্বাচন: কে কী কেন কীভাবে এবং এখান থেকে কোথায়!
পাকিস্তানের ৭৭ বছরের ইতিহাসের এবারের নির্বাচন যে সবচেয়ে কম বিশ্বাসযোগ্য হবে এ রকম ধারণা অনেক বিশ্লেষকের আগে থেকেই ছিল। এর কারণ ইমরান খান ও তার সহযোগীদের ওপর সামরিক বাহিনী যে দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তা থেকেই বোঝা যায়। এটাকে ইলেকশন না বলে ‘সিলেকশন’ বলা ভালো। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরাও নিন্দা করেছেন এটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। ভোটাররা যখন ভোট দিতে গেছে তখনো পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রভাব এং রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পূর্ণ ফুটে উঠেছে।
মিয়ানমার সীমান্তের উদ্বেগ কাটিয়ে বাংলাদেশ কি ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে মোকাবিলা করতে পারবে?
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে মিয়ানমারে চলছে নাটকীয় সংঘাত-বিদ্রোহ। একে যুদ্ধ বলাই শ্রেয়। এর মূল ফোকাস এখন রাখাইন প্রদেশের দিকে। আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। এটা শুধু ময়ানমারের জান্তা বাহিনীর জন্য ঝুঁকি বাড়ায়নি, পুরো অঞ্চলটাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আরাকান বাহিনী যদি বঙ্গোপসার এবং মিয়ানমারের কেন্দ্রস্থলের মধ্যে রাখাইন প্রদেশে নিশ্চিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে তা সামরিক বাহিনীর রাজ্য প্রশাসন পরিষদ (এসএসি)-কে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদারে আগ্রহ দেখিয়েছে ইইউ
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক কালে এ আগ্রহের কথা জানান ইউরোপীয় কমিশনাররা।
শূন্য-সমষ্টি নয়, পারস্পরিক লাভজনক দৃষ্টিভঙ্গি হবে মূল
জানুয়ারির ৭ তারিখ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দৌড় অনেক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্নায়ুবিনাশী ছিল। এর কারণ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, দেশের জাতীয় নির্বাচন দৃশ্যত বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য একটি জীবন-মরণ বাজির প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে। হয়তো বাজিটি এত চড়া নয়, তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি প্রতিযোগিতার ব্যাপার যে আছে, সেটা বাস্তব এবং তা বেশ কিছু সময় ধরে চলছে। প্রতিযোগিতার বিষয়টিকে চীনের বিআরআই মোকাবিলায় ভারতের বাফার রাষ্ট্র-সংক্রান্ত অগ্রাধিকার; চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি রাশিয়াকে বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন করায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো যে প্রেক্ষাপট থেকেই দেখা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে রাশিয়ার অবকাঠামোগত স্বার্থ রয়েছে এবং সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের পক্ষে প্রকাশ্য রাজনৈতিক সমর্থনকারী হয়ে উঠেছে। অনেকের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা বা উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কর্তৃত্ববাদ, একচ্ছত্র শাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমনের অভিযোগ। এসবের ভেতর দিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন।
ঢাকার কূটনীতি আরও গভীর নৈপুণ্য দাবি করে
নির্বাচন শেষ হয়েছে। ফল হয়েছে প্রত্যাশিত অনুসারেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনা এখন কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়া দিতে শুরু করেছে। রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মরক্কোর রাষ্ট্রদূত, ওআইসি, এবং এমনকি আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের কূটনৈতিক প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই অভিনন্দনের ধারা ইঙ্গিতবহ। নির্বাচন, বা বলা যায়, নির্বাচনের ফলাফল নিকটবর্তী অঞ্চলে কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, তার প্রকৃত প্রতিফলন। আরও বড় কথা, বাংলাদেশকে চীন, রাশিয়া ও ভারতের অভিনন্দন জানানো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।