সংঘাত-নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বান্দরবানের পর্যটন
অভ্যন্তরীণ সংঘাত আর নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের পর্যটনশিল্প। নতুন বছরের শুরুতেই আশানুরূপ পর্যটকের আগমনে স্বস্তি ফিরেছে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে।
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থানগুলোও। অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় গত বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
দেশের পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনাময় জেলা, বৈচিত্র্যময় বান্দরবান। এখানে পাহাড়ের চৌদ্দটি জনগোষ্ঠীর সহাবস্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। রয়েছে, পাহাড়ের প্রকৃতি ও শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো দর্শনীয় স্থান নীলাচল, মেঘলায় দুটি ঝুলন্ত সেতু, কেবল কার, বাংলার দার্জিলিং-খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, তমাতুঙ্গী, শৈলপ্রপাত ঝর্না, রুপালি ঝর্না, মুরুং ঝর্না, রিজুকঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্না, তিনাপসাইতার ঝর্না, দামতুয়া ঝর্না, বাকলাই ঝর্না, লাংলুক ঝর্না, বুদ্ধ টেম্পল, স্বর্ণমন্দির, রেমাক্রি বড়পাথর, দেবতাখুম, নাফাখুম, অমিয়খুম জলপ্রপাত, রহস্যময় আলীর সুড়ঙ্গ, দেশের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া ক্যাওক্রাডং, তাজিংডং ও শিপ্পি পাহাড়ের মত চোখজুড়ানো সব দর্শনীয় স্থান।
বান্দরবানের আলীকদমে দৃষ্টিনন্দন করুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নজর কাড়ছে ভ্রমণপিপাসুদের।ভিবি ফটো
তবে অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় গত বছর অনেকটাই পর্যটকশূন্য ছিল বান্দরবান। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দেখছেন, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাহাড়ের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা স্থানীয়দের ভাষায় ‘বম পার্টি’র সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাত ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, আলীকদম চার উপজেলা পর্যটকদের ভ্রমণে দফায় দফায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। যেখানে জেলার পর্যটনের মূলকেন্দ্রই হচ্ছে এই চারটি উপজেলা।
বান্দরবান হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোটেল আরণ্যের মালিক মো. জসিম উদ্দিন ও গার্ডেন সিটির মালিক জাফর আলম জানান, আগে সারাবছরই পর্যটকে মুখর থাকত বান্দরবান জেলা; কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে সেই চিরচেনা দৃশ্যটা যেন বদলে যায়।
২০২৩ সাল ছিল পাহাড়ের পর্যটনশিল্পের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পুরোপুরি পর্যটকশূন্য ছিল বান্দরবান। ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখাটাই ছিল ব্যবসায়ীদের বড় চ্যালেঞ্জ। সে সময়ে বেশকটি আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। তবে সংঘাত ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করেছেন নতুন বছরে।
ট্যুরিস্ট জিপ গাড়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল জানান, পর্যটকদের জন্য প্রায় তিন শতাধিক গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে বান্দরবানে। সংঘাত ও নিষেধাজ্ঞার কারণে গতবছরটি পর্যটকশূন্য থাকায় চরম অর্থকষ্টে দিন কাটিয়েছে পাঁচ শতাধিকের মত পরিবহণ শ্রমিক। তবে নতুন বছরে ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ট্যুরিস্ট গাড়িগুলো।
বান্দরবানে উৎপাদিত কোমর তাঁত কাপড়ের দোকানদার ও উৎপাদনকারী সবাই নারী। পাশাপাশি, পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নারীরা।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসায়ী প্রীতি বম ও শ্রাবন্তী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পর্যটকদের আগমন বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে হস্তশিল্প ও কোমর তাঁতের পোশাকের। গত বছর থমকে যাওয়া স্থানীয় পণ্যের উৎপাদনও বেড়েছে এ বছর।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, পর্যটকদের ভ্রমণে এখন কোনো বাধা নেই। ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি, ট্যুরিস্ট পুলিশও পর্যটকদের সুবিধার্থে সার্বক্ষণিকভাবে দর্শনীয় স্থানগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে