Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নতুন শিক্ষাপদ্ধতিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪

মুখস্থ বিদ্যা আর পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাপদ্ধতি থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ১৪ বছর আগে বাংলাদেশে চালু হয়েছিল সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি। তাতেও তেমন ফল পাওয়া যায়নি দেখে সরকার ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে, যার নাম ‘অভিজ্ঞতামূলক শিখন পদ্ধতি।’ এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে পাঠ ও শিক্ষা গ্রহণ করবে। তবে, সব শ্রেণিতেই এই পদ্ধতি এখনো প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। সব শ্রেণিতে এবং সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় এই পরিবর্তন আনতে ২০২৭ পর্যন্ত লাগবে বলে সরকার ধারণা দিয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাপদ্ধতি বহুবারই পরিবর্তন এসেছে। তবে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আশা করা যাচ্ছে, নতুন এই শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করবে। চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের যুগের সঙ্গে বাংলাদেশও তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, যা বাংলাদেশের রূপকল্প-৪১ এর স্বপ্ন পূরণ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জন করবে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণি অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারিত করা হবে। এটা হবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষা। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এতে এতকালের নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থী রূপান্তরিত হবে সক্রিয় শিক্ষার্থীতে।

কিন্তু বাস্তবতা আসলে কী রকম? নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করার পর থেকে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে, তারা এই শিক্ষাপদ্ধতি ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না। এমনকি, অনেক শিক্ষকও পরিষ্কার বোঝেন বলে মনে হয় না। যদিও অনেক শিক্ষকদের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। তারপরও সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, অনেক স্কুলে পুরোনো পদ্ধতিতেই পাঠদান বহাল আছে। কোচিং সেন্টার ও গাইড বইয়ের বন্ধের কড়াকড়ি নির্দেশ ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। তাও দেদার বহাল তবিয়তেই চলছে। এমনো দেখা গেছে, মূল বই বুঝতে না পেরে শিক্ষকরা গাইড বই থেকেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষাক্ষেত্রেই একটা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছে। নতুন শিক্ষাপদ্ধতি অনুসারে শহরাঞ্চলের ভালো কিছু স্কুলে হয়তো ঠিকঠাক পড়াশোনা হয়, গ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ স্কুলই এখনো সেই পুরোনো মুখস্থ বিদ্যার ওপরই নির্ভরশীল। তা ছাড়া, আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, ঢালাওভাবে যে মুখস্থ বিদ্যা বর্জনের কথা বলা হচ্ছে, তাও যৌক্তিকভাবে ঠিক বোধগম্য নয়। যে কোনো পড়া মুখস্থ তো করতেই হবে, মুখস্থ করা ছাড়া কি এমন কোনো বিদ্যা আছে।

কথাটা হবে, বুঝে মুখস্থ করতে হবে। সেই বোঝানোর বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এবং বোঝানোর মতো শিক্ষক বাংলাদেশে আসলেই খুব কম। বোঝানোর জন্য যে গভীর অধ্যায়ন ও তপস্যা প্রয়োজন তার সময় কোথায় বাংলাদেশের শিক্ষকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে জ্ঞানচর্চার প্রতি বেশির ভাগ শিক্ষকেরই তেমন উৎসাহ নেই- গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

কিছু বিষয় আছে, যেমন বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি বা সমাজবিজ্ঞান, যার সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। না-হলে পরে বড় হলে এসব সম্পর্কে আর আগ্রহ জন্মে না, কারণ গোড়াতেই গলদ থেকে যায়, বড় হয়ে এসব তারা আর বুঝতে পারে না। এসব বিষয় শুধু মুখস্থ করলে হয় না, বুঝতে হয়। সেই বোঝানোর ক্ষমতা শিক্ষক ও অভিভাবকদের থাকতে হয়; কিন্তু আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা কি তার জন্য প্রস্তুত?

কয়টি পরিবারে ব্যক্তিগত পাঠাগার আছে আমাদের দেশে? অভিভাবক ও শিক্ষকরা নিজেরা বা পড়লে ছেলেমেয়েদের শেখাবেন কী করে? মুখস্থ বিদ্যার হাত থেকে ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করতে হলে আগে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরই যথাযথ শিক্ষিত হতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ