নগরে ম্যানহোল বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে হবে
জার্মান দূতাবাসের এক কূটনীতিক ঢাকা শহরের ম্যানহোলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দুই বছর আগে ছোট্ট এক টুইট বার্তা দিয়েছিলেন। আর তাতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লেগে গিয়েছিল রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার খোলা ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা। এমনই ছোট বড় দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে, আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন নড়েচড়ে বসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কোনো ঘটনার জন্ম না হলে ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানহোল সংস্কারের বিষয়টি দৃষ্টির আড়ালে চলে গিয়ে পূর্বের অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই দেশের নগরব্যাপী ম্যানহোল নিয়ে দীর্ঘ বছরের বিড়ম্বনার আর অবসান হয় না।
এখন বর্ষকাল এই সময় নগরজুড়ে সড়ক খোড়াখুড়ি শুরু হয়, শুরু হয় শহুরে নাগরিকের ভোগান্তি। এমনকি কোনো কোনো সড়কের কাজ শেষ হতে ৩ মাসেরও অধিক সময় লাগে, তখন এই সড়কগুলোতে ম্যানহোল বিড়ম্বনার আর শেষ থাকে না। সাধারণত বর্ষাকালে ঝুমবৃষ্টি হলেই ম্যানহোলে পড়ে মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ। কিন্তু এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না এবং কোনো আলোচনাও তৈরি করে না।
খোঁজ নিলে জানা যাবে, গাফিলতি ও নজরদারির অভাব থাকে বলেই বারবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। যার জন্য কিছু মানুষের প্রাণ ও হাত-পা ভাঙার মাধ্যমে মূল্য চোকাতে হয়। তবে দেশের সব নগরের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, শুধু ঢাকা নয়, গাফিলতির এই পরম্পরা রয়েছে দেশের সব নগরে।
পানি নিষ্কাশনের জন্য শহরে ম্যানহোল থাকা জরুরি। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে ম্যানহোল বসানোর প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ না হওয়ায় চলাচলরত যানবাহন ও মানুষকে পড়তে হয় নানা দুর্ভোগে। খোলা ম্যানহোলগুলো মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পথযাত্রীদের জন্য যেন একটি মরণফাঁদ।
রাজধানীতে গড়ে প্রতি ৩০ মিটার অন্তর একটি ম্যানহোল রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার ৩৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ নালা এবং ৮৮০ কিলোমিটার পয়োনালায় ম্যানহোল রয়েছে ৪১ হাজার। দুই সিটি করপোরেশনের রয়েছে আরও ৩৩ হাজারের বেশি ম্যানহোল। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষেরও কিছু ম্যানহোল আছে। এসব ম্যানহোলে ঢাকনা লাগালেও কিছুদিন পরই সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। সংঘবদ্ধ চক্র চুরি করে ভাঙারির দোকানে বেচে দেয়। আবার নানা কারণে সেগুলো ভেঙেও যায়। সব মিলিয়ে অন্তত ১০ শতাংশ ম্যানহোল সব সময় ঢাকনাহীনই পড়ে থাকে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সেগুলো দ্রুত পুনঃস্থাপিত হয় না। তা ছাড়া প্রতিবছর সড়ক সংস্কার করার কারণে সড়কগুলোর ওপরের অংশ ম্যানহোলের ঢাকনা থেকে অন্তত ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। এর ফলে ঢাকনার ওপরের অংশগুলো বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। সড়কে চলাচলের সময় অসতর্ক অবস্থায় এসব গর্তে পড়ে যানবাহনগুলো প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে।
শুধু ম্যানহোলে পড়ে গিয়েই যে দুর্ঘটনা ঘটে, এমন নয়। অনেক সময় নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়েও শ্রমিকদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। কারণ নর্দমার পচা পানি ও আবর্জনায় বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। তাই শ্রমিকদের কোনো সুরক্ষাকবচ না থাকায় তাদের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
এমতাবস্থায় সিটি করপোরেশন বা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে তাদের কাজের ব্যাপারে আরও সতর্ক ও আন্তরিক হতে হবে। তারা যেন সহজে বর্জ্য নিষ্কাশন হয় এমন পদ্ধতিতে রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ম্যানহোল নির্মাণ করে। সেই সঙ্গে তাদের ম্যানহোলের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে আধুনিক প্রকৌশলগত ব্যবস্থা নিতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে আরও বেশি দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে