Views Bangladesh Logo

একজন প্রকৃত লেখকের নির্দিষ্ট কোনো ফরমেটে আটকে থাকা ঠিক নয়

Jabbar Al  Nayeem

জব্বার আল নাঈমএর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার

বারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈমের কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মার আওয়াজ’। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী এবারের বইমেলার আয়োজন, দেশের চলমান রাজনীতি, সাহিত্য ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন মাহফুজ সরদার

ভিউজ বাংলাদেশ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ চলছে। এরই মধ্যে বইমেলা ঘিরে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জব্বার আল নাঈম: আওয়ামী লীগ আমলে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হয়নি বইমেলা? হয়েছে। আদর্শ প্রকাশনী বন্ধ করা হয়েছিল কোন আমলে? বিভিন্ন বই নিষিদ্ধ করতে দেখেছি। এগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা না? ফলে বইমেলা এলে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো ঘটনার মুখোমুখি হই আমরা। যদিও এ বছরটা অন্য বছরের মতো না। কারণ, ২০২৪ জুলাই মাসে ঐতিহাসিক একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশবাসী। যে ঘটনার ফলে দেশ হয়েছে স্বৈরাচারমুক্ত। এমন পতনের পর দেশ স্বাভাবিক হতে দুই বছর সময় লেগে যায়। এর মাঝে অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। দেশ তো আর একই মত বা ধারার মানুষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। এখানে পলিটিক্যাল পার্টিগুলো পাওয়ারে নেই।

আবার যারা পালিয়েছে তাদের কর্মীরা তো বসে থাকবে না, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েই যাবে। যারা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষমতায়, তারা কিন্তু রুট পর্যায়ে পাওয়ার লেস। বুঝতে হবে, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর যদি সাপোর্ট না থাকে, দেশ আরও অস্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যাবে। তবে, এ বছর বইমেলা হচ্ছে এটা বড় আশ্চর্য ঘটনার একটি! বাকি কয়টি দিন ঠিকঠাক গেলে বলা যাবে, কালচারালি একটা বিজয়। দেখেন, এই বইমেলা কিছু মানুষ বয়কট করেছে। যদিও এতে মেলার কানাকড়িও ক্ষতি হয়নি। বরং বয়কটকারীদের আপসোস বেড়েছে। আরও বাড়বে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, প্রাণের মিলনমেলা; বইমেলায় সবাই আসুক এবং পরিশুদ্ধ হোক।

ভিউজ বাংলাদেশ: এবারের বইমেলায় আপনার কাব্যগ্রন্থ `আত্মার আওয়াজ' প্রকাশিত হয়েছে। এই বই প্রকাশের নেপথ্যে গল্প জানতে চাই।

জব্বার আল নাঈম: জুলাই বিপ্লব কিংবা ফ্যাসিবাদ সময়ে লেখা কবিতাগুলো নিয়ে ২০২৫ বইমেলায় কবিতার বই করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম প্রথম। পরে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়। যদিও সেই বইটিরও কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ করব। আর আত্মার আওয়াজ সুফি ঘরানার কবিতার কিতাব। জুলাই ৩৬ হয়েছিল মূলত মানুষের মুক্তির অভ্যুত্থান; কিন্তু দেখতে পেলাম সেখানে সুফিদের মুক্তি মিলেনি। পীর বা মাজারের মুক্তি মিলেনি। সেগুলোতে আক্রমণ করা হলো, সেগুলো আক্রান্ত করা হলো।

আমি চাই, এখানে সবাই থাকবে। কারও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা যাবে না। এই প্রতিবাদস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে লেখা কবিতাগুলো সংকলন করে আত্মার আওয়াজ কাব্যগ্রন্থটি নিয়ে আসি। স্মরণে রাখা উচিত এই বঙ্গে কোনো নবী-রাসূলের আগমন ঘটেনি। বিভিন্ন সময়ে সুফিদের আগমনে ইসলামটা পেয়েছি আমরা। ফলে এদিকের মানুষদের মনও সুফিদের মতোই নরম আবার গরম।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনার লেখালেখির শুরুর কথা কিছু বলুন। আপনার লেখা কবে প্রথম প্রকাশ হয়?

জব্বার আল নাঈম: শৈশব থেকেই লিখি। শুরুতে লিখতাম ছড়া কবিতা। তখন লিখতাম শখে। পরে শখটা প্রফেশনের মতোই হয়ে গেছে। এখন তো লেখালেখি ছাড়া বিকল্প কিছুই ভাবতে পারি না। প্রথম লেখা প্রকাশ হয় একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়।

ভিউজ বাংলাদেশ: কবিতা ছাড়া আপনার প্রকাশমাধ্যম আর কী কী?

জব্বার আল নাঈম:আসলে আমার শুরুটা কবিতা দিয়ে হলেও ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন সময় শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের দেবদাস আদলে একটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস লিখি। নাম রেখেছিলাম বাবলা। যদিও পরবর্তীতে ওই উপন্যাস আলোর মুখ দেখেনি। এখন এসে বুঝলাম, একজন প্রকৃত লেখকের নির্দিষ্ট কোনো ফরমেটে আটকে থাকা ঠিক নয়। অথবা থাকবেও না। সম্ভব হলে, অন্যান্য শাখাগুলোতেও বিচরণ করা দরকার।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি কোন মাধ্যম থেকে কবিতা আহরণ করেন? প্রকৃতি নাকি মানুষ থেকে?

জব্বার আল নাঈম: মানুষ তো প্রকৃতিরই একটা অংশ। প্রায় সব লেখকই প্রকৃতি থেকে নেয়। আমাদের চারপাশে মৌলিক বা যৌগিক সবকিছু প্রকৃতি। ফলে প্রকৃতি বারবার লেখককে তাড়িত করে বেড়ায়।

ভিউজ বাংলাদেশ: কবিতায় আপনি কী বলতে চান?

জব্বার আল নাঈম:
সামগ্রিকই বলতে চাই। আসলে যা বলতে চাই, যতটুকু বলতে চাই সবটা তো বলতে পারিনি। এটাও প্রকৃতি। পৃথিবীর প্রত্যেক কবি ও লেখক অনেকটা এমনই। দিন শেষে সেটা হয় সাধারণ মানুষের জন্য লেখা। সব লেখকই লিখে সাধারণ মানুষের জন্য। ধরা যাক, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানি লেখকরা লিখেছে পাকিস্তানের পক্ষে আবার বাংলাদেশের লেখকরা লিখেছেন বাংলাদেশের পক্ষে।

ভিউজ বাংলাদেশ:
কবিতার পাঠক সবসময়ই কম, এর কারণ কী?

জব্বার আল নাঈম: কবিতার পাঠক কখনই কম ছিল না। এটা একটা অনুমান। অনুমান দিয়ে সঠিক জাস্টিফাই অসম্ভব। যুগে যুগে কবিতার পাঠক বেশি ছিল, এখনো বেশি।

ভিউজ বাংলাদেশ: বর্তমানে কী লিখছেন? কী পড়ছেন?

জব্বার আল নাঈম: 
জুলাই বিপ্লব ও ফ্যাসিবাদ সময়ে লেখা কবিতাগুলো নিয়ে কাজ করছি। দ্রুতই বইটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে। পড়ছি বিক্ষিপ্তভাবে। সময়টা বইমেলা মাস তো, যখনই মেলায় যাই, টুকটাক কিনি, সেগুলোই উল্টানো হচ্ছে। পড়া হচ্ছে।

ভিউজ বাংলাদেশ:
নিয়মিত পাঠ অভ্যাস লেখকদের জন্য কতটা জরুরি?

জব্বার আল নাঈম: লেখকের জন্য পাঠ অভ্যাস জরুরি। পাঠ অভ্যাস থাকলে লেখকই উপকৃত হবে। সন্দেহাতীতভাবে এটাই সত্যি। কারণ, একটি ভালো বই ভালো একটি লেখাকে অনুপ্রাণিত করে থাকে।

ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই এবং এই রাষ্ট্রকে আপনি কীভাবে দেখতে চান?

জব্বার আল নাঈম: এখন গণতন্ত্রের চর্চাটা হচ্ছে। সবাই মত প্রকাশ করতে পারছে। গ্রাম থেকে একজন কৃষক বলতে পারছে তার পছন্দ অপছন্দের কথা। এটা কম কথা না। অনেকের কাছে, বর্তমান সময়কে অতিকথনের সময় বলা হচ্ছে। ব্যাপারটি এভাবেও দেখা যেতে পারে, গণতন্ত্র মানে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে তর্ক ও বিতর্ক থাকবে। দিন শেষে দেশ ও মানুষের উপকার হবে।

দীর্ঘ ১৬ বছর সেটার অনুপস্থিতির কারণে বিতর্ক ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছে জনগণ। এখন সেটা হচ্ছে। আশা রাখি পছন্দ ও অপছন্দ নিয়ে কথা বলার অভ্যাসটা অব্যাহত থাকবে। তবে, সবাই কথা বলার একটা বিপদও আছে। একজন ব্যক্তি যদি সববিষয়ে কথা বলে, তার বলাটা কখনই সঠিক হবে না, ফলে তার সংযমও দরকার। এই বোধটা থাকতে হবে। নয়তো সরকার সবার কথা রাখতে পারবে না। সর্বোপরি দেশের পরিস্থিতি ও অবস্থার কথাও মাথায় রাখতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ