টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাইতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাকে এবং তার পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ব্যবহার করার জন্য ব্রিটেনের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা দ্য সানডে টাইমসকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যবহৃত লন্ডনের সম্পত্তিগুলোর বিষয়ে তদন্ত করা উচিত এবং যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি “সরাসরি চুরির” মাধ্যমে সেগুলো থেকে লাভবান হয়েছেন তাহলে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য তার পদত্যাগ ইস্যুতে চাপ বাড়াবে। তবে সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ইতোমধ্যেই তার বিকল্প খুঁজছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সরকারি বাসভবন যমুনায় সানডে টাইমসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনুস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা একটি ‘বিড়ম্বনা’।
এ সময় একটি সরকারি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ শাসনামলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়ে গেছেন, যার একটি অংশ দিয়ে বিদেশে সম্পদ, যেমন সম্পত্তি কেনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তারা দেখিয়েছে কীভাবে টাকা সরানো হয়েছে। তবে এটি চুরি নয়। যখন আপনি চুরি করেন, আপনি তা লুকিয়ে রাখেন। এটি চুরি।’
লন্ডনে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত সম্পত্তিগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটি সরাসরি চুরি। আর কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি একজন যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য এতে জড়িত হন তাহলে এটি অবশ্যই একটি বড় বিষয়। আমরা [পূর্ববর্তী শাসনামলে] সবকিছু কেড়ে নেয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। তাই আপনি যখন এই বিষয়টি বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন, আমরা স্বস্তি বোধ করছি।’
টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যবহৃত সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা উচিত কিনা? এমন প্রশ্র জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অবশ্যই। কমিশনের উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করা।”
তিনি আরও বলেন, যদি সম্ভব হয় তাহলে আওয়ামী লীগ সহযোগীদের মাধ্যমে কেনা সম্পত্তিগুলো ফেরত আনা উচিত। এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য। কীভাবে এগুলো ফিরিয়ে আনা যায়। কারণ এটি জনগণের অর্থ। আর যখন আমি জনগণ বলি, এটি সেই বিলিয়ন ডলারের মানুষদের নিয়ে নয় যাদের (সাধারণ জনগণ) নিয়ে আপনি কথা বলছেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার কর্মকর্তারা বিদেশে রাখা অর্থ এবং সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, যেখানে তারা থাকে, যেখানে তাদের প্রাসাদ সেখানে সম্পত্তির পুরো কমপ্লেক্স কিনে রেখেছেন। আপনি আমাদের খুব কাছাকাছি দেশগুলোর রাজধানীতে এটি দেখতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব সেগুলো খুঁজে বের করতে। তারপর আরও দূরে, ক্যারিবিয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাও।
সানডে টাইমসের মতে, ব্রিটেনের এফবিআই সমতুল্য ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে