Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত

Tanmay Mondal, Kolkata

তন্ময় মণ্ডল, কলকাতা

রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

মাত্র দুমাস বাকি থাকলেও ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত, শঙ্কিত পাঠক, দর্শনার্থী এবং প্রকাশকরা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ অনিশ্চয়তা জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ও ছাড়পত্রের অপেক্ষায় মেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড।

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে বাংলা বইপ্রেমিরা প্রতি বছর বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। মেলার আকর্ষণ বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে শুধুমাত্র বাংলাদেশি প্রকাশনার বিশাল সংগ্রহ প্রদর্শন ও বিক্রির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশটির প্রখ্যাত লেখকদেরও অতিথি করে নিয়ে আসা হয়।

দেশভাগে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও দুই বাংলার সাংস্কৃতিক বন্ধন অটুট থাকারও নিদর্শন কলকাতা বইমেলা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা অস্থিতিশীলতা চলছে। ভারত ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখনও ভারত সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় বাংলাদেশ হয়তো এবারের কলকাতা বইমেলায় অংশ নিতে পারবে না, বলছেন আয়োজকরা।

পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তারা প্রাথমিক কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র না পাওয়াকে উল্লেখ করে। উদ্বেগ প্রকাশ করে আয়োজকরা বলেন, বাংলাদেশের অনুপস্থিতি বাঙালি পাঠকদের হতাশ করবে।

কলকাতার সল্টলেকের করুণাময়ী বাস টার্মিনালের কাছে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করবেন। মেলাটি চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি বছর মেলায় একটি 'থিম কান্ট্রি' থাকে এবং অতীতে বাংলাদেশকে একাধিকবার বেছে নেয়া হয়েছে। আগামী বছর জার্মানি 'থিম কান্ট্রি' হবে, যা মেলার ৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম৷

উৎসবের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। সেসব জানাতেই পার্কস্ট্রিটের একটি পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে আসে গিল্ড। সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় নিশ্চিত করেন যে, ভারতীয় প্রকাশনাগুলোর পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়াসহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো ২০২৫ সালের মেলায় অংশ নেবে।

'তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত বাংলাদেশ, যার অংশগ্রহণ মেলাটির মূল বৈশিষ্ট্য। অনেক বাঙালি পাঠক মেলায় বাংলাদেশি দুর্লভ বই সংগ্রহে উন্মুখ থাকেন'- বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে, কলকাতায় জার্মানির ভাইস কনসাল সাইমন ক্লিনপাস, কলকাতার গোথে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যাস্ট্রিড ওয়েজ।

বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে নির্ভরশীল। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারেই কাজ করবো'।

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি থাকবে কি না জানতে চাইলে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে গিল্ড। তবে ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, মেলা শুরুর আগে আরও দুটি সংবাদ সম্মেলন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার লোগো উন্মোচন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, আগামী বছরের মেলায় এক হাজার ৫০টি স্টল-প্যাভিলিয়ন থাকবে। চলতি বছরের মেলায় এসেছিলেন ২৭ লাখ দর্শনার্থী আর বই বিক্রি হয় ২৩ কোটি টাকার।

এদিকে অধীর আগ্রহে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের খবরের অপেক্ষায় আছেন অসংখ্য পাঠকও।

উৎসাহী বইপ্রেমি আইটি পেশাদার সুপ্রকাশ দে মন্তব্য করেন, 'আমরা যারা বই ভালোবাসি, তাদের কাছে বইমেলা দুর্গাপূজার চেয়েও বড় উৎসব। এ বছর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন না থাকলে বাঙালি হিসেবে বিরাট ক্ষতি হবে। মেলায় আমার অভিজ্ঞতা অসম্পূর্ণ মনে হবে'।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ