সর্বজনীন পেনশনের কী হবে?
সর্বজনীন পেনশন স্কিম শুরু থেকেই সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০২৩ সালে ১৭ আগস্ট যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন, তখন থেকেই অনেকে বলেছিলেন, এটা সরকারি তহবিল বৃদ্ধির একটা উপায়। তা ছাড়া বৈষম্য উসকে দেয়ার কিছু ব্যবস্থাও সেখানে ছিল। যেমন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মাসের বেশি সময় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি বাতিল করতে বাধ্য হয় বিগত সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ। যা সব নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের আওতায় ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম ভূমিকা রাখবে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পর থেকে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’- এই চার স্কিম সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। গত ৮ জুলাই পর্যন্ত চার ধরনের পেনশন স্কিমে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫২ হাজারে; কিন্তু গত ৪৯ দিনে গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে নতুন গ্রাহক হয়েছেন মাত্র ১৯ হাজার ৯৫৯ জন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এ সংখ্যা একেবারেই কমে আসে। গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৯ জন গ্রাহক ১২০ কোটি ৩১ লাখ টাকার কিছু বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বর্তমানে স্থবির দশায় পতিত হয়েছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত এক মাসের বেশি সময় বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির কার্যক্রমেও। যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই গত বছরের আগস্টে চালু হওয়া এ কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
এমতাবস্থায় সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে অনেকই উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পটি খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্যান্য বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এটিও হয়তো হবে, তবে এ ক্ষেত্রে একটু সময় লাগবে। কারণ, এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে।
আমরা চাই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির একটা আশু সমাধান জরুরিভিত্তিতে করা হোক। যেসব মানুষ এর মধ্যেই এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের চিন্তামুক্ত করা হোক। তাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ও নিম্নআয়ের মানুষ আছেন, এই কর্মসূচির একটা আশু সমাধান না হলে তারা অথৈ সাগরে পড়বেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে