Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দাবি মানার পরও থামছে না পোশাক খাতের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনা দেশ ত‌্যাগের পর তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে ইতিমধ‌্যে আন্দোলনকারীদের সবগুলো দাবিই মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপরও এই খাতের অস্থিরতা থামছে না। উল্টো বিভিন্ন দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। এতে নতুন করে এ খাত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, একটি দুটি পোশাক করাখানার কর্মীরা শুরুতে বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন শুরু করে। পরে তা ছড়িয়ে যায় বেশিরভাগ কারখানায়। আন্দোলনকারীরা ধীরে ধীরে বেশ কিছু দাবি জানায়। সর্বশেষ ১৮টি দাবি জানায় তারা। সরকারের মধ্যস্থতায় সবগুলো দাবিই পূরণের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এরমধ‌্য দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সবগুলো কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে আসে মালিক ও শ্রমিকরা। তবে তিনদিন না যেতেই শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, নিম্মতম মজুরি ২২ হাজার টাকা করার দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। এই আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ৪৯টি কারখানা।

প্রত‌্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকালে থেকেই আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার কারখানাগুলোর সামনের সড়কে অবস্থান করে মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাথে যোগ দেয় পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিক। সকাল ১০টার পর আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আশেপাশের বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের ডাকাডাকি করে ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক্ষেত্রে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিয়ে আসলে ওই অঞ্চলের অন্তত ৮ থেকে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ ‘বাধ‌্য’ হয়ে ছুটি ঘোষণা করে।

আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দাবি, ২৪ তারিখের বৈঠকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও শনিবার পর্যন্ত মামলা প্রত‌্যাহার হয়নি। এমনকি শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আন্দোলনরত বেক নীট লিমিটেডের শ্রমিকরা জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে তাদের কারখানার ২৭ জনের নামে মামলা প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও সেটা না করে উল্টো শ্রম আইন দেখিয়ে কারাখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আশেপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সকালে লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করার পর জিরাবো এলাকার মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরাও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কয়েকদিন যাবত বেতন বৃদ্ধি করে ২২ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছিল। এদের সাথে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যুক্ত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা বেলা ১১টা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছিল।

মন্ডল গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, ২৪ তারিখ বৈঠকের পর থেকেই কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী মালিকপক্ষের হয়ে শ্রমিকদের মারধর করছে। মারধর করার প্রতিবাদে আমরা আজ আন্দোলন করছি। তবে কোন কোন শ্রমিককে বা কাকে কাকে মারধর করা হয়েছে, তার সঠিক তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

শিল্প পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, শনিবার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে মোট ৪৯টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অর্থাৎ নো ওয়ার্ক, নো পে’র ভিত্তিতে ১২টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ৩৭টি কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে কিংবা ছুটি আছে।

বন্ধ কারখানা গুলোর মধ্যে জেনারেশন নেক্সট, স্কাইলাইন গার্মেন্টস লিমিটেড, ম্যাংগোটেক্স লিমিটেড, গ্লোরিয়াস সান ফ্যাশন, সাউদার্ন গার্মেন্টস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, স্কাইলাইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, নিউএইজ গার্মেন্টস, সিডকো লিমিটেড অন‌্যতম।

এ বিষয়ে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ