Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে মাতৃহারা শিপলা খাতুনের জিপিএ-৫, জানা নেই স্বপ্নপূরণের পথ

Rezaul karim

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে মাতৃহারা শিপলা খাতুন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থীর ফলাফলে খুশি তার পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা। শিপলা নিজেও খুশি। তবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে তমসাবৃত্ত পথের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা তার মনে। শিপলা জানেন না, কীভাবে তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে।

শিপলা খাতুন এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় যশোরের চৌগাছা উপজেলার মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এসএসসিতেও বাণিজ্য শাখায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি জেএসসিতে বৃত্তি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। শিপলা খাতুন চৌগাছা উপজেলার ধূলিয়ানী ইউনিয়নের কুষ্টিয়া রামভাদ্রপুর গ্রামের দিনমজুর পিতা নজরুল ইসলামের চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট।

শিপলা খাতুন জানান, দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার মা রাশিদা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে তার বাবা বড় তিন বোনকে বিয়ে দিয়ে দেন অনেক আগেই। মা মারা যাওয়ার পর তাই বড় অসহায় হয়ে পড়েন শিপলা; কিন্তু পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাননি তিনি। ধূলিয়ানী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসিতে ভর্তি হন চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজে।

গ্রামের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে কলেজে নিয়মিত যাতায়াত করেও তার ক্লান্তি ছিল না। মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিপলা খাতুন। তার বিশ্বাস ছিল, জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করবেন; কিন্তু পাসের পর কী হবে, সে চিন্তায় হাসি নেই শিপলার মুখে। বরং অর্থাভাবে লেখাপড়ার এখানেই ইতি ঘটবে কি না; সে আশঙ্কার কালো মেঘ তার মুখে।

স্বপ্নের কথা তুলে ধরে মেধাবী শিপলা জানান, এখন তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে লেখাপড়া করে বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে প্রশাসনের ক্যাডার হতে চান তিনি। একজন প্রশাসনিক ক্যাডার হয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার স্বপ্ন তার।

শিপলা বলেন, ‘বাবা পরের জমিতে শ্রম দেয়, নিজেদের ভিটাবাড়ির ৫ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই। তাই কীভাবে তার স্বপ্ন পূরণ হবে, তা জানি না। দারিদ্র্যের কারণে বাবা বড় তিন বোনকে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিয়ে দিয়েছেন। আমাকেও বিয়ে দিতে চান; কিন্তু আমার স্বপ্ন আমি লেখাপড়া শিখে বড় হবো, হবো মানুষের মতো মানুষ।’

শিপলার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনেক আগেই মেয়েকে (শিপলা) বলেছি, মা তুমি পড়া বাদ দাও; কিন্তু সে পড়বে এই তার প্রতিজ্ঞা। সব পরীক্ষায় খুব ভালো ফল বয়ে আনছে, অন্য বাড়িতে ভালো ফল হওয়ায় আনন্দ হচ্ছে, কিন্তু আমার বাড়িতে কোনো আনন্দ নেই। এত বড় পাস করেছে মেয়ে, অথচ আমি পিতা হয়ে একটি মিষ্টি কিনে ওর মুখে দিতে পারিনি। বাবা হয়ে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে! ওর স্বপ্ন পূরণে অনেক টাকার দরকার; কিন্তু আমি কীভাবে তার স্বপ্ন পূরণ করব, কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। তাই সমাজের কোনো বিত্তবান যদি আমার মেয়ের পাশে থাকেন, তাহলে হয়তো ও একদিন গন্তব্যে পৌঁছাবে।’

চৌগাছার মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান বলেন, শিপলা অত্যন্ত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে অসহায় পরিবার হতে উঠে আসায় আমরা কলেজ থেকে সর্বদা সহযোগিতা করেছি। এখন সে চমৎকার একটি রেজাল্ট করেছে। আমি তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ