Views Bangladesh Logo

বহিরাগতদের সরকারি সার্ভার ‘ভাড়া’ দেন ইউপি চেয়ারম্যান-সচিব

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্ম সনদ। তাও বাংলাদেশের সরকারি সার্ভারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর যে অবস্থা, তাতে এটা একটা তুচ্ছ বিষয় মাত্র। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রুডোর একটি জন্ম নিবন্ধন ছড়িয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া এই জন্ম নিবন্ধনটি করা হয়। এ ঘটনার পরপরই ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি ভিউজ বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম।

ইউএনও বলেন, “এই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

জানা গেছে, সরকারি সার্ভারে জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের। সার্ভারে প্রবেশের অনুমতিও রয়েছে তার। সচিব আবেদন করবেন আর মঞ্জুরের দায়িত্ব চেয়ারম্যানের। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। বাহিরের ব্যক্তিকে সার্ভারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত হিসাব সহকারীদের অভিযোগ, দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ করছেন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা। তারা ইউনিয়ন পরিষদের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী।

জন্ম নিবন্ধন করার সুযোগ পেয়ে উদ্যোক্তারা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পরবর্তীতে সেই টাকার ভাগ পাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব।

অথচ মাস চারেক আগে হিসাব সহকারীদের এ কাজ করার জন্য ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠি ইস্যু করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খোদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা।

তারা আরও জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ বাহিরের লোকজন করায় অনেক ভুয়া সনদও তৈরি করা হয়। যার প্রমাণ ট্রুডোর জন্ম সনদ। তবে শুধুমাত্র এই একটিই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধনগুলো দেখতে গেলে আরও অনেক ভুল বের হবে।

তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব যাদের দিয়ে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন করান তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) রাশেদুল ইসলামের এক চিঠিতে তা স্পষ্ট হয়। চিঠিটি দেশের সকল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়। এর পরেও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদনার জন্য প্রত্যেক নিবন্ধক কার্যালয়ের দুজনকে (চেয়ারম্যান-সচিব) গোপন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী জনসেবক (সরকারি বেতনভুক্ত) কাজগুলো করবেন। কিন্তু তারা এই কাজ বাহিরের ব্যক্তি দিয়ে করান, যা উচিত নয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে অনেক ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ তারা করলে তা নির্ভুল ও গতিশীল হবে ।

হিসাব সহকারীদের দিয়ে এসব কাজ করানের জন্য ওই চিঠিতে অনুরোধ করেন রাশেদুল ইসলাম।

এ নিয়ে কথা হয় বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'একটি জন্ম নিবন্ধন করতে বয়স ভেদে ৫০-১০০ টাকা লাগে। কিন্তু চেয়ারম্যান-সচিবের কথা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন উদ্যোক্তারা।'

এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, 'আমার ইউনিয়ন পরিষদে বাহিরের লোককে (উদ্যোক্তা) দিয়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করানো হয়।'

এ ব্যাপারে বগুড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সরকারি সার্ভারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড বাহিরের কোনো ব্যক্তিকে দেওয়ার নিয়ম নেই। যদি কেউ দিয়ে থাকেন, অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ