Views Bangladesh Logo

বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

ত সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক দিনে ১২ জেলায় বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু সারা দেশের মানুষকে একেবারে মর্মাহত করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বজ্রপাতে নিহত অনেক মানুষের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যা সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। তার মধ্যে একটি ছবি, বজ্রপাতে নিহত মানুষটির শরীর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, দৃশ্যটি একেবারেই অসহনীয়।

বজ্রপাতে এক দিনে এত মানুষের মৃত্যু খুবই উদ্বেগজনক। বজ্রপাতের এই প্রবণতা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে; কিন্তু সম্প্রতি বজ্রপাতে এতসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ কী? প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বাংলাদেশে। বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের হিসাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এ দুটি বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তা ছাড়া গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার কারণেও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানান তারা।

বজ্রপাত একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর ভয়ংকর গ্রাস থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সচেতনতা জরুরি। এ সময় কিছু পদক্ষেপ ব্যক্তির সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। পাশাপাশি মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি পদক্ষেপও জরুরি; কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রতি বছর বজ্রপাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়েও মানুষ যেমন যথেষ্ট সচেতন হচ্ছে না, সরকারও তেমন যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছের চারা এবং ৩৫ লাখ তালের আঁটি রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত প্রকল্পটির অধীনে প্রায় শতকোটি টাকা গচ্চা যায়। দায়িত্বশীলরা একটি সময় পর এসে বলেছিলেন, তালগাছ বড় হতে ৩০-৪০ বছর সময় লাগে। সেজন্য প্রকল্পটি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়।

এরপরও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরাঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রনিরোধক দণ্ডসহ বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি নির্মাণ করে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই। এমনকি ২০১৭ সালে বজ্রপাতের পূর্বাভাসের জন্য ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আট স্থানে স্থাপন করা হয় লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর- এলডিএস, যার মাধ্যমে ১৫ মিনিট আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের তথ্য জানার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কাজ করেনি।

এরপর ২০২৩ সালে সরকার ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ একটি প্রযুক্তি চালু করার সময়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সোমবারের ১৮ জনের মৃত্যু প্রমাণ করছে সরকারের প্রকল্পগুলো ব্যর্থ হয়েছে। বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করতে হলে কার্যকরী উদ্যোগ যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া। পাশাপাশি মানুষকে নিজ থেকেই বজ্রপাতের আগাম পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয় থাকতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ