যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস সংকট দূর করুন
গ্যাসের সংকট থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে গাজীপুর মহানগর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বাসা-বাড়ির রান্নাবান্না ও কারখানার কাজ। গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানার উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, সরবরাহ কমে যাওয়ায় গাজীপুরে শিল্পকারখানা ও বাসা-বাড়িতে তীব্র গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও জ্বলছে না রান্নার চুলা, আবার কোথাও আগুন থাকলেও তা মিটমিট করছে। এ কারণে রান্না ও খাবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন গাজীপুর মহানগর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া কারখানাগুলোতেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন কমেছে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার বেশির ভাগ কারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসাবাড়ির গ্রাহকরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে গ্যাসের চুলায় ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। চুলা যে পরিমাণে জ্বলে, তাতে রান্নার কাজ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচও যেমন বাড়ছে ভোগান্তিও হচ্ছে।
গাজীপুরে একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পণ্য উৎপাদন। শিল্প মালিকদের অভিযোগ, প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় সেটি নেমে আসে মাত্র দুই-তিনে। আবার কোনো কোনো কারখানায় নেমে এসেছে শূন্যে। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা আছে, সে পরিমাণ সরবরাহ নেই। সরবরাহ কম থাকায় বাসা-বাড়ি ও শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতি এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। ঢাকার শহরতলিগুলোতেও সকালবেলা ঠিক মতো গ্যাস পাওয়া যায় না।
এই গ্যাস সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক এলাকায় লোডশেডিংও দেখা দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর সমাধান কী? মানুষ বাড়ছে, গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে; কিন্তু গ্যাস তো আর বাড়ছে না। এখন মাত্র ২০২৪ সাল, আগামী দশ-বিশ বছর পর কী হবে? গ্যাসনির্ভর যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে এগুলোরই বা কী হবে?
গ্যাস ব্যবহারকারীদের সুখবর নেই, আছে দুঃসংবাদ। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সম্প্রতি জানিয়েছে, গ্যাস সংকট শিগগিরই কাটবে না। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস খাত চলছে রেশনিং (এক খাতে সরবরাহ কমিয়ে অন্য খাতে দেয়া) করে। দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। কোনো কারণে সরবরাহর চেয়ে কমলেই বেড়ে যায় সংকট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ কোটি ঘনফুট।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জনিয়েছেন, শীতের আগেই এসব সমস্যা সমাধান করা হবে। তার জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরাও চাই, অতি শিগগিরই গ্যাস সমস্যার সমাধান করে গ্যাস ব্যবহারকারীদের জীবন সরকার স্বাভাবিক করবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে