Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

অবশেষে মার্কিন যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা

Simon Mohsin

সাইমন মোহসিন

সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪

গাজা দেখে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন, ‘বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি, অর্থনীতি সবই বিধ্বস্ত। এখনো বোমা পডছে সেই ভগ্নস্তূপে।’

গাজা বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বসবাসের অযোগ্য; কিন্তু সৌভাগ্যবশত, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এসেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তিন-পর্যায়ের একটি প্রস্তাব উন্মোচন করেছেন, যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি থাকবে, যা পরে স্থায়ী হতে পারে। এ প্রস্তাবের সঙ্গে এই পরিকল্পানাও গ্রহণ করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজার পুনর্নির্মাণের কাজও হবে। বাইডেন বলেছেন, তার প্রস্তাব ইসরায়েল গ্রহণ করেছে। এটি আসলে উভয়পক্ষকে যুদ্ধ থামানোর একটি প্রচেষ্টা। হামাসও এতে সমর্থন জুগিয়েছে বলে দাবি করা হয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। হামাস দ্রুত এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। একটি যৌথ বিবৃতিতে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ উল্লেখ করেছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। জাতিসংঘে ইসরায়েলের মুখপাত্র তার বিবৃতিতে স্পষ্টই বলেছেন যে, হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আক্রমণ চালিয়ে যাবে। যে আলোচনায় কোনো ফল নেই সেসবে জড়িয়ে তারা সময় নষ্ট করবেন না। ইসরায়েল এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে, বাইডেনের এ কথার অর্থ কী তাহলে?

ইউএনএসসি পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে প্রস্তাব পাস করেছে। এটিকে আইনত বাধ্যতামূলক করেছে। এটি এখন কার্যকরভাবে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে। হামাসের বিবৃতিতে সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি চাওয়া ছাড়া গাজাবাসীর আর কিছু করার নেই। তারা এ ব্যাপারে মরিয়া। সারা বিশ্বই যুদ্ধবিরতি চাচ্ছে এখন। আশার কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারাও এখন এটি চাচ্ছে।

এর আগে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, বাইডেন প্রস্তাবের কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসের সামরিক এবং শাসন ক্ষমতাকে ভেঙে দেয়ার আগে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা আসলে অমূলক। নেতানিয়াহুর এ কথা জাতিসংঘের মুখপাত্রের বিবৃতির সঙ্গে মিলে যায়। এটাই একমাত্র সরকারি বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া, যা এখন পর্যন্ত ইসরায়েল থেকে পাওয়া গেছে। এতে এটাই স্পষ্ট যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আসলে তেমন ফল ফলবে না।

পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপে আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলিরা এরই মধ্যে গাজায় ভূসম্পত্তি বেচা-কেনা শুরু করেছে। ডানপন্থি ইসরায়েলি গোষ্ঠী এবং জায়নবাদীরা স্পষ্ট বলে দিয়েছে, গাজা ফিলিস্তিন বা আরবদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে না। ইসরায়েলিরা আপাতদৃষ্টিতে সিদ্ধান্তে এসেছে যে, ফিলিস্তিনিদের এখান থেকে ভাগতে হবে! এ ধরনের অসহিষ্ণুতা এবং অনিচ্ছার সঙ্গে, কোনো পরিকল্পনা গাজাবাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ফল বহন করতে পারবে কি না, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাতে বরং তাদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, অস্ত্রবিরতি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তাতে অন্তত বোমা পড়া কমবে, হতাহত মানুষের সংখ্যা কমবে।

বাইডেনের মনে কী পরিবর্তন এসেছে। কে জানে যে, যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা অন্তত তিনি গ্রহণ করলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এটি খুবই উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করছে। স্টেট সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ করেছেন, যাতে এই পরিকল্পনাটি সব পক্ষের দ্বারা অনুমোদিত হয়। তার বিবৃতিতে বরং ইঙ্গিত দিচ্ছে, হামাস যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে। এখন বরং দেখা যাচ্ছে পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টির জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরায়েল। এটাও স্পষ্ট যে, এই পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি প্রশাসনের মধ্যে যে স্পষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। তাই অনেকে মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি সাময়িক বোমা হামলা থেকে গাজাবাসীকে নিস্তার দিলেও গাজাবাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ বয়ে আনবে না। তবে তারা হয়তো বেঁচে থাকবে!

লেখক: রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশ্লেষক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ