চলে গেলেন তবলার জাদুকর ওস্তাদ জাকির হোসেন
ভারতের কিংবদন্তি তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
ফুসফুস ও হৃদরোগজনিত অসুস্থতা নিয়ে সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালটিতে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাকে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে জাকির হোসেনের পরিবার জানায়, তিনি মারা গছেন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে ভারতের বেশিরভাগ শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছিল, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছিলেন।
আনন্দবাজার পত্রিকাও জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
রাতেই মমতা এক্স-এ লিখেছিলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। দেশ ও তার কোটি ভক্তের জন্য বড় ক্ষতি। জাকির হোসেনের পরিবার এবং তার ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা’
পরে, আমির আউলিয়া এক্স-এ পোস্টে বলেছিলেন, তিনি জাকির হোসেনের ভাতিজা। জাকির হোসেন মারা যাননি। চাচার শারীরিক সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
ওস্তাদ জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া তখন পিটিআই-কে বলেন, ‘আমার ভাই এই মুহূর্তে গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত এবং সারা বিশ্বের ভক্ত ও অনুরাগীদের তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনার অনুরোধ জানাচ্ছি’।
১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জাকির হোসেন খান। তিনি তার বাবা ও মহান তবলা বাদক ওস্তাদ আল্লা রাখার কাছে অল্প বয়সেই গান শেখা শুরু করেন। শিশু জাকির সাত বছর বয়সে তার প্রথম কনসার্ট এবং ১২ বছর বয়সে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। জন্মস্থান মুম্বাইয়ে শিক্তিষাজীবন শেষে তিনি ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
ভারত এবং বিদেশের মাটিতে ৬০ বছরেরও বেশি সঙ্গীত সাধনা করে গেছেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় এবং বিশ্ব সঙ্গীতের সংমিশ্রণে কিছু সেরা ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক সঙ্গীতজ্ঞের সাথে মঞ্চে বাজিয়ে তবলাকে সম্পূর্ণ নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন।
বিশ্ব সঙ্গীতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন এই কিংবদন্তির শিল্পী। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রথম সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সেরা গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম, সেরা গ্লোবাল মিউজিক পারফরম্যান্স এবং সেরা সমসাময়িক ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবামের জন্য ৬৬তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮৮ সালে, ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে। ২০০২ সালে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ এবং গত বছর ‘পদ্মবিভূষণ’ লাভ করেন। জাকির হোসেন ১৯৯০ সালে ‘সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার’ পান, যা সঙ্গীতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান বলে বিবেচিত।
জাকির তার স্ত্রী আন্তোনিয়া মিনেকোলা এবং কন্যা আনিসা কুরেশি এবং ইসাবেলা কুরেশিকে রেখে গেছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে