পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু: কীভাবে বেছে নেয়া হবে নতুন পোপ
রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ভ্যাটিকানের আকাশে এখন শোকের ছায়া। রেওয়াজ অনুসারে তার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই চলবে নতুন পোপ বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া। খবর এএফপি।
পোপ ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। তিনি ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সব ক্যাথলিক চার্চের প্রধানও।
পোপের মৃত্যুর পর নয়দিনের শোক পালন করে ক্যাথলিক চার্চ। সাধারণত মৃত্যুর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনের মধ্যে পোপকে সমাহিত করা হয়।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্ব পালন করেন কার্ডিনাল ক্যামারলেনগো, যিনি হোলি সি-এর কোষাধ্যক্ষও। নতুন পোপ নির্বাচনে কার্ডিনালদের সম্মেলনও (কনক্লেভ) আহ্বান করেন তিনি।
পোপের মৃত্যু এবং নতুন পোপ নির্বাচনের মাঝের সময়কে বলে ‘সেডে ভেকান্টে’। ল্যাটিন এই শব্দের অর্থ ‘দ্য সিট ইজ ভ্যাকেন্ট’ বা আসন খালি। এ সময়ে চার্চ পরিচালনাসহ সম্মেলন আয়োজনের ভার থাকে কলেজ অব কার্ডিনালসের হাতে। কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গো চার্চের এই সময়ের কাজের দেখাশোনা করেন।
কনক্লেভে উপস্থিত থাকেন কার্ডিনাল ইলেক্টররা। মৃত পোপকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই কার্ডিনালরা এসে পৌঁছান ভ্যাটিকান সিটিতে।
নিয়ম অনুসারে, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কার্ডিনালদের অবশ্যই ভ্যাটিকানে পৌঁছাতে হয়। তারা বিশেষভাবে নির্ধারিত বাসস্থানে অবস্থান, সম্মেলন পরিচালনা করেন এবং ভোট দিয়ে পরবর্তী পোপ নির্বাচিত করেন তারা।
ভ্যাটিকানের ওই গোপন সম্মেলনে প্রায় ১২০ জন কার্ডিনাল ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। যদিও বিশ্বজুড়ে কার্ডিনালের সংখ্যা প্রায় ১৯৫ জন, তবে ৮০ বছরের বেশি বয়সী কার্ডিনালদের ভোট দেয়ার অনুমতি নেই।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন কার্ডিনালরা ভ্যাটিকান প্রাসাদে জড়ো হন। নতুন পোপ নির্বাচিত করতে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। নির্ধারিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলতে থাকে।
কার্ডিনালরা একমত হতে না পারলে ভোটগ্রহণ একদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়, যেন তারা প্রার্থনা ও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে পারেন।
দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেলে নির্বাচিত কার্ডিনালকে পোপ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তিনি জয় স্বীকার করলে পরবর্তী পোপ হন। তবে কোনো কার্ডিনাল দুই তৃতীয়াংশ ভোট না পেলে সব ভোটের স্লিপ নির্দিষ্ট চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সেই চুল্লির চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া দেখেই সবাই বুঝতে পারেন, পোপ নির্বাচন হয়নি। তখন আবার একই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পোপ নির্বাচনের জন্য এই ভোটাভুটি এবং আলোচনা সবই হয় একটি বন্ধ কক্ষে।
পোপ নির্বাচিত হয়ে গেলে শুরু হয় নাম ঘোষণার প্রক্রিয়া। ভ্যাটিক্যানে সেই সময়ের মধ্যেই জড়ো হয়ে যান প্রচুর মানুষ। ঊর্ধ্বতন কোনো কার্ডিনাল তখন পোপের নতুন নাম ঘোষণা করেন।
নতুন পোপ নতুন পোশাক পরে জনসম্মুখে আসেন। এরপর পরেন ‘ফিশারম্যান রিং’। ঈশ্বরের নামে শপথ নেয়ার পর তিনি ভ্যাটিক্যানের ব্যালকনি থেকে ভাষণ দেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে