চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মাসুদ আলী খান
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান আর নেই। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল চারটা ২০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার গ্রিন রোডের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
প্রবীণ এই অভিনেতার ভাগনের স্ত্রী শারমিনা আহমেদ জানান, গত ৬ অক্টোবর ৯৬ বছরে পা রেখেছেন মাসুদ আলী খান। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য কয়েকবার নেয়া হয়েছিলো হাসপাতালে। সর্বশেষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে বাসায়ই চলছিলো চিকিৎসা।
তিনি জানান, বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটা-চলাও করতে পারতেন না এই গুণি অভিনেতা। হুইল চেয়ারই ছিল ভরসা। বেশিরভাগ সময় তাই ঘরের ভেতরেই কাটাতে হতো। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরেও ছিলেন মাসুদ আলী খান।
মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু মাসুদ আলী খানের। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছোট পর্দায় অভিষেক। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও নজর কেড়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন বাংলা নাটকের চেনা মুখ।
মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে। বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা সিতারা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। কলকাতায় কিছুকাল পড়াশোনার একটি অংশ শেষ করেন মাসুদ আলী খান। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। স্যার সলিমুল্লাহ কলেজেও পড়াশোনা করেছেন এই অভিনেতা।
১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তাহমিনা খানকে। ব্যক্তিজীবনে এই অভিনেতার এক ছেলে ও এক মেয়ে। পেশাজীবনে সরকারের নানা দপ্তরে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন।
সহকারী রবিন মন্ডল জানান, অভিনেতার একমাত্র ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি দেশে ফিরলে বা তার সিদ্ধান্তে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দাফন করা হবে মাসুদ আলী খানকে।
প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল মাসুদ আলী খানের। সে সময়েই সরস্বতী পূজায় ‘রানা প্রতাপ সিং’নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৫৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় এ দেশের প্রথম নাটকের দল ‘ড্রামা সার্কেল’ এর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পর পর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তার পথচলা শুরু।
তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘দুই দুয়ারি’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’। আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’।
২০২৩ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন মাসুদ আলী খান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে