উদ্বোধনী সংখ্যা ১ : স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা
আমার বিশ্বাস ‘ভিউজ বাংলাদেশ’ গণমাধ্যমে একটি নতুন ধারা তৈরি করবে
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এর জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৩ অক্টোবর, ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। সম্প্রতি তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভিউজ বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক এম এ খালেক ও ভিউজ বাংলাদেশের সহকারী সম্পাদক গিরীশ গৈরিক।
ভিউজ বাংলাদেশ: আজ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, দ্বিভাষিক পোর্টাল ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। আপনি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে ভিউজ বাংলাদেশের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ‘ভিউজ বাংলাদেশ’ এর কাছে আমি চাইব, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের যে তথ্য চাহিদা, তা সঠিকভাবে পূরণ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদের যে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, যা সাধারণত আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই না, সে বিষয়গুলো যেন ভিউজ বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়, তাহলে পাঠকরা যেমন তথ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তেমনি তথ্যের বিশ্লেষণ জানতে পারবে। তাদের কী করণীয় তাও উপলব্ধি করতে পারবে। আমি মনে করি, ‘ভিউজ বাংলাদেশ’ দেশের গণমাধ্যমে একটি নতুন ধারা তৈরি করবে, যার প্রয়োজন আমরা বহুদিন ধরেই অনুভব করছি।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জন করে চলেছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অর্জন আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রেটিংয়ে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থার রেটিংয়ে বাংলাদেশকে উন্নীয়নশীল দেশের প্রাথমিক তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে। এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ অবিরামগতিতে কাজ করে চলেছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যম কীভাবে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কারণ গণমাধ্যমই জনমত সৃষ্টি করে। জনমত যদি স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে থাকে তাহলে বাংলাদেশকে সত্যি সত্যি স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আমরা যদি জনমত গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস ১৭ কোটি মানুষের সম্মিলিত এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক সময় স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রথম শর্তই হচ্ছে উপযুক্ত, স্মার্ট এবং সুনাগরিক তৈরি করা। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সহজ হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় বারবার সোনার বাংলা গড়ে তোলার কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার লালিত স্বপ্নকেই জাতির সামনে নতুন করে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘আমার স্বাধীন বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন আমার স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ গড়ার। সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে আমার সোনার মানুষ প্রয়োজন’, সেটাও তিনি বলেছিলেন। এই সোনার মানুষই হবে দেশের স্মার্ট জনগণ। ভিউজ বাংলাদেশ যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত এবং লাভবান হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইব, ভিউজ বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশে যদি স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে হয় তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও স্মার্ট হতে হবে। আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে কি স্মার্ট মানুষ গড়া সম্ভব হবে?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলি, স্মার্ট নাগরিকের কথা বলি, তখন স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও বলি। আমাদের বর্তমান যে শিক্ষা ব্যবস্থা আছে, তার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার হবে স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার জন্য। স্মার্ট নাগরিক তৈরির জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে আমাদের স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হবে। শিক্ষার প্রতিটি স্তরকেই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার উপযোগী করে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। শুধু শিক্ষার শীর্ষ পর্যায়কে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার উপযোগী করে গড়ে তুললে হবে না।
প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরকেই স্মার্ট নাগরিক তৈরির উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। অনেকেই আছেন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিভিন্ন পেশায় চলে যান। তাদের যদি উপযুক্ত এবং সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা না যায়, তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই শিক্ষার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করব।’
শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে কোনো জাতি কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে অর্থ ব্যয়ের যে অঙ্গীকার করেছিলেন আজ আমরা সেই দাবি করছি। বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি ২০২৩ সালের বাস্তবতায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা বুঝতে না পারলেও জাতিসংঘ তা অনুধাবন করছে। ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি যখন আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে, তখন তারা তাদের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছিল, ‘ইনভেস্ট ইন পিপল, প্রায়োরাটাইজ এডুকেশন।’ মানুষের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেখানে মানুষকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালে যে মন্তব্য করেছিলেন, জাতিসংঘ ২০২৩ সালে এসে সেই বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী ছিলেন। আমি মনে করি, ভিউজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে। শিক্ষা বিটকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। শিক্ষাবিষয়ক সংবাদ প্রকাশ, প্রচার ও বিশ্লেষণকে তারা অগ্রাধিকার দেবে। তাহলেই আমরা স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে পারব। স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হলে স্মার্ট বাংলাদেশ সৃষ্টি করা অসম্ভব নয়।
ভিউজ বাংলাদেশ: ইউনেস্কো বলেছে, কোনো দেশের মোট জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করতে হবে; কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ এখনো জিডিপির ২ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন কী?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তরের দশকেই শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলেছিলেন। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে শিক্ষা খাতের ব্যয় অনেক বেড়েছে। কাজেই মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হয়তো নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছে না; কিন্তু আগামীতে এটা আমাদের করতেই হবে। বিশেষ করে যদি আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। তবে এ মুহূর্তে শিক্ষা খাতের অবকাঠামোগুলো এমনভাবে সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা হলে তা আমরা ধারণ করতে পারি।
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। এই অর্থ ব্যবহার করে আমরা শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে পারি সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ব্যাপারে এখনই আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমরা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বাস্তবায়ন করছি। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের ৪ নম্বর এজেন্ডার আছে শিক্ষা। এসডিজির যে ১৭টি গোল আছে, তার প্রতিটিতেই শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া আছে। আমি মনে করি, প্রজাতন্ত্রের কার্যক্রমে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত শিক্ষা। আমি দেখিছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই কোনো স্থানে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, সেখানে শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা যদি সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যাই তাহলে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া কঠিন কিছু নয়।
ভিউজ বাংলাদেশ: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট শিক্ষক তৈরি করতে হবে। আমাদের শিক্ষক সমাজ কতটা স্মার্ট বলে আপনি মনে করেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: শিক্ষকদের যদি উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তাহলে তারা নিজেদের স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। সে যোগ্যতা তাদের আছে। শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। প্রশিক্ষণ দেয়া না হলে শিক্ষকরা নিজেদের উপযুক্ততা অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারবেন না। আমাদের দেশের শিক্ষকরা যথেষ্ট প্রতিভাবান এবং যোগ্যতাসম্পন্ন। তাদের প্রশিক্ষণ দিলে যে কোনো বিষয় অতি অল্প সময়ের মধ্যে রপ্ত করে ফেলতে পারবেন। শিক্ষাকে বলা হয় একটি জাতির মেরুদণ্ড। বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে এই জাতির ভীত হিসেবে দেখেছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর সত্তরের দশকে বাংলাদেশ যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত, তখনই বঙ্গবন্ধু প্রায় ৪০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিক্ষা যদি জাতির ভিত হয়, তাহলে সেই ভিতের মেরুদণ্ড হচ্ছে শিক্ষকরা। উপযুক্ত বেতন-ভাতা দিয়ে মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
বর্তমান সরকার আধুনিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে যাচ্ছেন। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে তারা শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। শুনেছি, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের ধারণাটি আনা হয়েছে ফিনল্যান্ড থেকে। আমরা জানি, ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা যে খুবই উন্নত; কিন্তু নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে দেশে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে শিক্ষকরা এই কারিকুলাম সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত নন। আমি আশা করব, সরকার দেশের কিছুসংখ্যক শিক্ষককে ফিনল্যান্ডে পাঠিয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনবেন। তারা দেশে এসে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে অন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করবেন। তাহলে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, তা দূর হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিকভাবে শিক্ষা দান করতে পারবেন। আমরা যদি এই কাজটি সঠিকভাবে করতে না পারি, তাহলে প্রস্তাবিত শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল আরও বিস্তৃত হবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: একজন শিক্ষক হিসেবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে আমি কখনোই সন্তুষ্ট নই। আমি নিজেও যখন শ্রেণিকক্ষে যাই এবং পাঠদান করি, তারপর বেরিয়ে এসে মনে হয় বিষয়টি বোধ হয় এভাবে বললে আরও ভালো হতো। আসলে একজন শিক্ষক কখনোই তার কাজে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তার অতৃপ্তি থাকবেই। আমাদের শিক্ষার মান ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আগামীতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মান আরও ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: অভিযোগ আছে দেশের স্থানীয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেগুলোতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। পর্যাপ্তসংখ্যক ভালো শিক্ষক নেই। উপকরণের অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: এ অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবহিত আছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানেই গড়ে উঠুক না কেন, শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক না দিতে পারি, উপকরণের অভাব থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা পাস করে বেরোবে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এ জন্য আমার দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে, সব কলেজকে নিজ নিজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে স্থানীয় কলেজগুলোকে সংযুক্ত করা গেলে শিক্ষার মান উন্নত হতে পারে। সারা দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই স্থানীয় কলেজগুলোকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
ভিউজ বাংলাদেশ: স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্রমেই লাইব্রেরি বিমুখ হয়ে যাচ্ছে এর কারণ কী?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমরা তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে বাস করছি। সব কিছুই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা যে পড়াশোনা করবে তার সব কিছুই নেটে পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই তারা কষ্ট করে লাইব্রেরিতে যাবার চেয়ে নেট থেকে পড়া তৈরি করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার অভ্যাস যে কমে গেছে, তা নয়। তারা কাগজে মুদ্রিত বইয়ের পরিবর্তে ইন্টারনেটে বই পড়ছে। এই পরিবর্তনটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তারপরও কাগজে মুদ্রিত বই পড়ার প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন বা তিন দিন গ্রন্থাগার পিরিয়ড থাকতে পারে। সেই সময় ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্যতামূলকভাবে লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করবে। লাইব্রেরিতে পড়ার ওপরও পরীক্ষায় মূল্যায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে