Views Bangladesh Logo

Amar Ekushey Book Fair

বইমেলায় বই কেনার চেয়ে ছবি তোলায় বেশি আগ্রহ

বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর চতুর্থ দিন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি)। মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। বইমেলার অধিকাংশ স্টলকর্মী বই বিক্রিতে হতাশার কথা জানিয়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বর ঘুরে দেখা যায়, লেখক-পাঠক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় অনেকটাই মুখরিত ছিল বইমেলা। স্টলে স্টলে ভিড়। ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন পাঠকরা। বই দেখা বা কেনার চেয়েও বেশিরভাগ দর্শনার্থীকে ছবি তুলতে ব্যস্ত দেখা যায়। অনেকে আবার বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা হরেক রকম সাজসজ্জা করে মেলায় ঘোরাঘুরি করছেন। দর্শনার্থী অনুযায়ী বইক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।

বই বিক্রিতে হতাশার কথা জানিয়ে অবসর প্রকাশনীর স্টলে মাহমুদুল হাসান নামে একজন জানান, সম্প্রতি একটা বড় ‘গণঅভ্যুত্থান’ হয়েছে। সে হিসেবে বইমেলা নিয়ে মানুষের যে আগ্রহ থাকার কথা, তা দেখা যাচ্ছে না। আমরা আশা করেছিলাম বইমেলা এবার ভালোভাবে জমবে; কিন্তু একদম বিপরীত। মানুষ খুবই কম। যারা আসছেন তারা ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন। বই বিক্রি একেবারে নাই বললেই চলে।

তিনি বলেন, সামনের দিনগুলো কী হবে- এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বর্তমানের কথা চিন্তা করলে একদমই পরিস্থিতি খারাপ।

অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের এক স্টলকর্মী বলেন, এখনো বইক্রেতাদের সমাগম সেভাবে হয়নি। দর্শনার্থী আসতেছে, বই দেখতেছে; কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। হয়তো শেষের দিকে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু আগের মতো আগ্রহটা দেখা যাচ্ছে না।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের এক স্টলকর্মী রাফি আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন বিক্রি হচ্ছে না। বইয়ের প্রেমে আসলে বেচাবিক্রি ভালো হতো। মানুষ বইয়ের প্রেমে আসতেছে না। নিজেদের প্রেমে আসতেছে। যেমন ছবি তোলার জন্য। কোন প্রকাশনী কোন স্টল কেমন সাজিয়েছে এগুলো দেখতে বেশি আসে।

তবে বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সবুজপাতা প্রকাশনীর স্টলকর্মী আশা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত থ্রিলার, চিরায়ত বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। আরও বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করি।’

ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বইমেলায় ছবি তোলা, আড্ডা দেয়া, ঘোরাঘুরিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কবি শাহেদ কায়েস। তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, বইমেলায় এই যে মানুষ আসে, সবাই হয়তো বই কেনে না। অনেকে হয়তো প্রেম করতে আসে, আড্ডা দিতে আসে, ঘুরে বেড়াতে আসে। এই আসা-যাওয়া। দেখতে দেখতে বইয়ের প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়। মেলায় সবাই যে বই কিনতেই আসবে এমন তো কোনো কথা নেই।

শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা শুরু হলেও এখনো ছুটির দিন আসেনি। অন্য বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে শিশু চত্বরে। সেই হিসেবে এখনো অপ্রস্তুত বলা চলে শিশু চত্বর। তবে শিশু চত্বরে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে স্টল সাজিয়েছে প্রকাশনীগুলো। লিটল ম্যাগ চত্বরও এখনো জমে উঠতে দেখা যায়নি।

মেলার চতুর্থ দিনে নতুন এসেছে ৪৭টি বই। এর মধ্যে গল্প ১টি, উপন্যাস ৫টি, প্রবন্ধ ২টি, কবিতা ১০টি, গবেষণা ৫টি, ছড়া ৩টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৩টি, নাটক ২টি, ইতিহাস ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি ও অন্যান্য ২টি বই। আর সবমিলিয়ে বইমেলার প্রথম চার দিনে নতুন বইয়ের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭টিতে।

মেলা শুরু হয় বিকেল তিনটায় এবং চলে রাত নয়টা পর্যন্ত।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ