ভোটারদের জন্য অপেক্ষা
ভোট যেমনই হোক, সাংবাদিকদের পেশাগত ব্যস্ততার কমতি নেই। ভোটের দিন ভোরে যখন বাসা থেকে বের হই, রাস্তায় সুনসান নীরবতা। এটা শুধু ভোটের দিনের ভোর বা সকালের চিত্র নয়। শনিবার মধ্যরাতে যখন বাসায় ফিরেছি, তখনো রাস্তাঘাট ফাঁকাই ছিল। দুটি কারণ হতে পারে। এবার ভোট হচ্ছে রোববার। ভোটের দিন সরকারি ছুটি। আগের দুদিন ছুটির সাথে ভোটের ছুটি মিলিয়ে অনেকের জন্য ঈদের ছুটি হয়ে গেছে। এ সুযোগে অনেকেই হয়তো ঢাকার বাইরে বা দেশের বাইরে বেড়াতে চলে গেছেন। আবার অনেককে জানি, পেটের দায়ে ঢাকায় থাকলেও তাদের নাড়ি পোতা গ্রামে, অনেকে ভোটারও নিজেদের গ্রামে। তাই একই সঙ্গে ছুটি কাটাতে এবং ভোট দিতে সপরিবারে গ্রামে চলে গেছেন।
তারচেয়ে বড় কথা হলো, শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে ৪ জনের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করেছে বিরোধী দল। নির্বাচনের আগের রাতে সারা দেশে ১৪ জেলায় ২১ কেন্দ্রেও আগুন দিয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা। তাতেও সাধারণ মানুষ কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতে পারেন। তারচেয়ে বড় কথা, পৌষের কুয়াশা মাখা আদুরে রোদের সকালটা আলসেমিতেই কাটছে অনেকের।
শীতের সকালে ঢাকার রাস্তাঘাট সুনসান হলেও অফিসে এসে ঢাকার বাইরের চিত্র দেখে অবাকই হয়েছি। সাতসকালেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন। বিশেষ করে নারীদের লাইন আমাকে বিস্মিত করছে। গ্রামের অনেকে সকাল সকাল ভোট দিয়ে নিজেদের কাজেকর্মে লেগে যান।
এবারের নির্বাচনে দলীয় জয়-পরাজয় নিয়ে কোনো কৌতূহল নেই। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থবারের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত। তারপরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করতে আওয়ামী লীগ এবার দলের বিদ্রোহীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাতেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হচ্ছে। অন্তত ১০০ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘ঈগল’ বা ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রার্থীদের শক্ত লড়াই হবে। এবার লড়াইটা মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় তিনজনের প্রাণ গেছে। নির্বাচনের সকালে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে প্রাণ গেছে এক নৌকা সমর্থকের।
জয় নয়, আওয়ামী লীগের জন্য এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভোটারদের কেন্দ্রে আনা। তবে বললেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে না। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেখানে এমনিতেই ভোটাররা ছুটে আসবে। সমস্যা হলো ঢাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ নেই বললেই চলে। সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা-৪, ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮তে কিছুটা লড়াই আছে। তবে ঢাকা-১ এবং ঢাকা-১৯ আসনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তাই সেখানে ভোটার উপস্থিতিও বেশি হবে।
বিএনপি অংশ তো নেয়ইনি, বরং নির্বাচন বর্জনের ডাক দিচ্ছে এবং নাশকতা করে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচন ঠেকানোর আর কোনো সুযোগ নেই। তবে বিএনপি না থাকায় উৎসবমুখরতায় ঘাটতি আছে। এবারের নির্বাচনে বিদেশি সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। তবে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা ভোটারদের উপস্থিতির চেয়ে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ লেখা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বরং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
শীতের সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের জন্য অপেক্ষা ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে শীত, কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য, আর লম্বা হচ্ছে ভোটের লাইন। আফসোস হচ্ছে, সারা দেশে যদি একটা অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো; তাহলে আরও জমজমাট ভোট উৎসব হতো। তবুও নির্বাচনি প্রক্রিয়াটা বজায় থাকুক। মানুষ ভোট দিতে আসুক।
সময়: সকাল ১১:২৮ মিনিট
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে