ওয়াসার সিবিএদের কাছ থেকে দায়িত্ববোধের পরিচয় চাই
শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে মতামত বিনিময় করার জন্য কর্মচারী-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী নিজস্ব সংগঠন হলো সিবিএ (যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি)। জাতীয় প্রতিষ্ঠানে, কলকারখানায় সিবিএর কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রম অধিদপ্তরের অধীনে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসায় সিবিএরা আছেন নামমাত্র। যেমন খুশি তেমন তারা অফিসে আসেন, কেউ মাসের সব দিনই অনুপস্থিত। কেউ মাসে দু-চার দিন অফিসে পা রাখলেও আসছেন দেরিতে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এই ধারা চললেও মাস ফুরালে সময়মতো পাচ্ছেন বেতন। তারা সবাই ঢাকা ওয়াসার বিএনপিপন্থি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অফিস ফাঁকি ঠেকাতে ২০১৮ সালে ওয়াসার সে সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করেন। তখন থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বায়োমেট্রিক যন্ত্রে হাতের আঙুল চেপে বা মুখ দেখিয়ে কার্যালয়ে উপস্থিতি জানান দিতেন। আগের ওয়াসা প্রশাসনও হাজিরার ব্যাপারে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। তখন ওয়াসায় সিবিএ (কালেক্টিভ বার্গেনিং অথরিটি) নেতাদের দৌরাত্ম্য বাড়তে দেননি তাকসিম। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থি সিবিএ নেতারা রাতারাতি সক্রিয় হয়ে উঠেন। দাপট দেখিয়ে ওয়াসা ভবনের চারতলায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি কার্যালয়ও বরাদ্দ নেন তারা। এতে সিবিএ নেতাদের প্রভাব আরও বেড়ে যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, যেটুকু সময় ওয়াসার কার্যালয়ে তাদের দেখা যায়, সে সময়টা দলীয় কার্যক্রম বা বদলি-নিয়োগ তদবিরেই ব্যস্ত থাকেন। তাদের দাপট এতটাই বেশি, কেউ কিছু বলার সাহস দেখান না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বদলে উল্টো তাদের বাড়তি আবদার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সিবিএর শীর্ষ তিন নেতার হাজিরার তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, কর্মস্থলে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত থাকছেন সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন পাটোয়ারী। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত আট মাসে মাত্র চার দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে সিবিএর সভাপতি আজিজুল আলম খান গত আট মাসে অফিস করেছেন মাত্র ১১ দিন।
এভাবে চলতে থাকলে ওয়াসার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই কার্যকর থাকতে পারে না। সিবিএ অকার্যকর থাকলে অন্য কর্মকর্তারাও ফাঁকির সুযোগ পান এবং তাতে করে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয় না। আমরা চাই, সিবিএরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিক। বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি; কিন্তু বিএনপিপন্থি শ্রমিক নেতাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তারাই বুঝি এখন ক্ষমতায়। আর এরকম অনিয়ম হলে বিএনপি দলটির ওপরও মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। কোনো নেতাকর্মীর অবহেলা-অনিয়মের অভিযোগ পুরো দলটির ওপর পড়ুক তা নিশ্চয়ই তাদের কাম্য নয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিরও উচিত তাদের শ্রমিক নেতাদের নিজস্ব দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে