Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারী উন্নয়নে চাই অর্থনৈতিক বিনিয়োগ

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

নারীর শ্রম স্বাস্থ্য শিক্ষা আইন পারিবারিক সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গত একশ বছরে নারী তার অনেক অধিকার আদায় করে নিতে পেরেছেন; কিন্তু এখনো নারীর অনেক অধিকার আদায় বাকি। বিশেষ করে শিক্ষায় ও অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো এখনো নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।

আশার কথা নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিস্ময়কররকম অগ্রগতি অর্জন করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী, নারী-পুরুষ সমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। শ্রমবাজারেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড়ে ৩৫ ভাগের চেয়ে বেশি। নারী শিক্ষার হার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতকরা ৯৮ দশমিক ৭ ভাগ। বাংলাদেশের নারীর অগ্রগতি দেখে বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বলেছেন, বাংলাদেশের নারীরা ভারতের নারীদের চেয়ে এগিয়ে আছে।

নারীর ক্ষমতায়নের পথে যত বাধা আছে, তার সরকার সেগুলো দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ জাতীয় বাজেটে নারীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ। প্রধানমন্ত্রী উৎসাহে, অনুপ্রেরণায় এবং তার সরকারের সহযোগিতায় অনেক নারী উদ্যোক্তারূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নারীর সমঅধিকার সমসুযোগ: এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’। নারীর জন্য বিনিয়োগ করা ছাড়া নারীকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। নারীর জন্য বিনিয়োগ কেবল শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে করলে হবে না, নারীকে উদ্যোক্তারূপে, সৃষ্টিশীলরূপে প্রতিষ্ঠিত করতেও প্রভূত বিনিয়োগ প্রয়োজন। অন্যথায় বিপুলসংখ্যক নারী পিছিয়ে থাকবে, যা সমাজে অনিবার্যভাবে অসমতা ও বৈষম্য প্রতিষ্ঠা করবে।

বাংলাদেশে নারীর অধিকার অনেক দিক থেকে অগ্রগতি হলেও কিছু ক্ষেত্রে দুঃখজনকভাবে এখনো পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে নারীর প্রতি সংসহিতা এখনো বন্ধ করা যাচ্ছে না। যদিও সহিংসাতায় শিকার নারী হেল্পলাইনে (১০৯) কল করে যে কোনো মুহূর্তে জরুরি সেবা নিতে পারেন; কিন্তু আইনি অধিকারের ভয়ে অনেক নারী পিছিয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আইনি অধিকার ভোগে বাংলাদেশের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে। কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের তিন ভাগের এক ভাগ আইনি অধিকার ভোগ করেন। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নম্বর ৩২ দশমিক ৫, যা দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের বিচারে বাংলাদেশ সপ্তম। আমরা বলতে চাই, এমন তথ্য দেশের জন্য লজ্জার।

নারীর ক্ষমতায়ন মানে শুধু বিশেষ কিছু নারীর অধিকার নয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশে সুবিধাপ্রাপ্ত নারীরাই কেবল বিশেষ সুযোগ-সুবিধা-অধিকার পেয়ে থাকেন। প্রান্তিক নারীরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে এখনো নারীর বাল্যবিবাহের হার ৫৪ শতাংশ।

প্রশ্ন হচ্ছে যে দেশের নারী একজন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ সে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? যদিও নারী ও কন্যাশিশুর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন বন্ধে দেশে ইতিবাচক আইন ও নীতিমালাও আছে; কিন্তু যথাযথ আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে এখনো দেশে শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। তাই নানা ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি সত্ত্বেও নারীর প্রতি এ ধরনের মনোভাব এখনো পিছিয়ে পড়া সমাজের কথাই মনে করিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে, কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার না পেলে দেশের সুসম অগ্রাধিকার অসম্ভব।

মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি কোনো একক সত্তা নয়, ব্যক্তি সামাজিক সমষ্টির অংশ। তাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারীদের যথাযথ অধিকার, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তাই নারীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ, অর্থনৈতিক সমতা, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং নিপীড়নমুক্ত সমাজব্যবস্থ্যা

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ