Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব

শুধু কথায় নয়, বাস্তবায়নে প্রমাণ চাই

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাজেই সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ এবং আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মাঝে সততা ও নৈতিকতার প্রচণ্ড অভাব দেখা যায়। সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিকতা উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব তলব করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা এমন উদ্যোগের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, সেইসঙ্গে এটা বলতে চাই, যেন এমন উদ্যোগ শুধু কথার বেড়াজালে আটকে না থাকে। পাশাপাশি এই হিসাব নিয়ে শুধু বস্তাবন্দি করে রাখলে হবে না, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে হবে।

গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এতদিন পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার রীতি থাকলেও এখন থেকে দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি বছর হিসাব দিতে হবে কড়ায়-গণ্ডায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় ১ সেপ্টেম্বর।

গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে হিসাব নেয়ার দিনক্ষণ ও প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে জানানো হয়। জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব পাঁচ বছর পরপর জমা দেয়ার নিয়ম ১৯৭৯ সালে চালু হয়। ২০০২ সালে তা সংশোধন করা হয়। চাকরিজীবীর জবাবদিহি নিশ্চিতে ‘আচরণ বিধিমালায়’ এ নিয়ম যুক্ত করা হয়। তবে চার দশকের বেশি সময় ধরে এই নিয়ম পুরোপুরি মানেননি কেউ।

অতীতে দেখা গেছে, বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের অধীন কর্মচারীর কাছে বারবার তাদের সম্পদের বিবরণী চেয়েও পায়নি। চাকরি আচরণবিধির সংশ্লিষ্ট দুটি ধারায় (ধারা-১২ ও ১৩) সম্পদ বিবরণী নিজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার বিধান রাখা আছে। তবে তা কেউ কানে তোলেননি।

এই পটভূমিতে চলতি বছরের সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সরকারি চাকুরেকে সম্পদের হিসাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আর বাকি মাত্র ৬৯ দিন। তবে ২০২৫ সাল থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার শেষ সময় হবে ৩১ ডিসেম্বর।

সম্পদের হিসাবে গরমিল হলে শাস্তির ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে, নিরপরাধীদের সম্পদের হিসাব গোপন থাকবে; কিন্তু তারপরও অনেকের মনে সংশয় থেকে যাচ্ছে, আসলেই বিষয়টি কতটা কীভাবে কার্যকর হয়, তা বাস্তবায়নের পরেই বোঝা যাবে, এর আগে নয়। কারণ এর আগের সরকারওগুলো নানাভাবে এসব কথা বলেছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। তা ছাড়া, অনেকের গোপন সম্পদ থাকে, শাশুড়ি-শালীর নামেও তো সম্পদ ক্রয়ের ইতিহাস আছে বাংলাদেশে। এসব জটিল প্রক্রিয়া দূর করে সম্পদের হিসাবে কতটা স্বচ্ছতা প্রকাশিত হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়। আমরা শুধু বলতে চাই, এসব যেন কথার কথা না হয়ে বাস্তবায়নও হয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ