সহ্য ক্ষমতার বেশি স্কুলব্যাগের ওজন নয়
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড; কিন্তু আমাদের দেশের খুদে শিক্ষার্থীদের কাঁধে-পিঠে ভারী ব্যাগ বহনের কারণে সেই মেরুদণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। ব্যাগের ভারে অনেক শিশুর পিঠ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যেন বইপত্র নয়, ভারী কোনো বোঝা কাঁধে নিয়ে তারা স্কুলে যাচ্ছে। কবীর সুমনের গানের ভাষায় বলতে গেলে, ‘স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী, আমরা কি আর বইতে পারি? এও কি একটা শাস্তি নয়? কষ্ট হয়, কষ্ট হয়!’ সত্যিই বড্ড কষ্ট হয়। বছর বছর ধরে কর্তৃপক্ষের নজর এড়ানোর কারণে খুদে শিক্ষার্থীরা সত্যি বিপদে আছে, যা দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য উদ্বেগজনক।
খুদে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ এত ভারী হয়ে যাওয়ার কারণ কী? দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের ৬-৭টি বই। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, ধর্মসহ চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার। এর সঙ্গে আছে সব বিষয়ের আলাদা খাতা। পানির বোতল ও টিফিন বক্স নিয়ে গেলে তো ব্যাগ আরও ভারী হয়ে যায়। অনেক অভিভাবক হয়তো স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার সময় ব্যাগ নিজের হাতে বহন করেন, কিন্তু স্কুলে গিয়ে ওই শিশুটিকে পাথরের মতো ভারী ব্যাগটি নিজেকেই বহন করতে হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তো বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। ৮-১০টি বই। বয়ঃসন্ধিকাল পার হওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলেমেয়ের শারীরিকভাবে আর কতখানি শক্তি-সামর্থ্য থাকে! এত ভারী ব্যাগ বহন করার শক্তি কি তাদের থাকে? আসলে ভারী ব্যাগ পিঠে বহন করার চেয়েও কঠিন মাথায় বহন করা। এতগুলো বিষয় কি একটি ছোট্ট শিশুর মাথায় ধরে!
এমন অনেক স্কুলে দেখা গেছে, কম্পিউটার-ল্যাব নেই; কিন্তু শিশুদের কম্পিউটারের বই আছে। কম্পিউটার ব্যবহার ছাড়া বই পড়ে কি কম্পিউটার শেখা সম্ভব? কোনটি মাউস, কি-বোর্ড, সিপিইউ, মনিটর তা মুখস্ত করে একটি শিশুর কী হবে? কম্পিউটারের সামনে বসলে এমনিতেই তো সে কম্পিউটার ব্যবহার শিখে যাবে।
একই কথা আরও অনেক বিষয় নিয়ে বলা যায়। শিক্ষা ব্যবস্থার নীতি-নির্ধারক যারা, তারা নিশ্চয়ই অনেক বিচক্ষণ ব্যক্তি; কিন্তু যারা বিদেশ ঘুরে এসেছেন, বিদেশি স্কুল পরিদর্শন করেছেন বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে তারা সবাই বলেছেন, উন্নত দেশের স্কুলে তারা এরকম দেখেননি। এরকম ভারী ব্যাগ বহনের অভিজ্ঞতা নেই উন্নত দেশের স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের। তাহলে আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলব্যাগ কেন এত ভারী হচ্ছে।
ভারী ব্যাগের তুলনায় শিক্ষার ধার তো তত বাড়ছে না। প্রথম শ্রেণি থেকে ইংরেজি পড়েও অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পরও বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী ঠিক মতো ইংরেজি শিখতে পারছে না? তাহলে এত ভারী ব্যাগ বহন করে লাভ কী? কেবলই মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়া! শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাবিষয়ক সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে দ্রুতই ভাবতে হবে। ব্যাগের ওজন কমিয়ে আপনারা বরং শিক্ষার মান বাড়ান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে