জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত: গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হোক
গত শুক্রবার (১ মার্চ) আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের সাধারণ মানুষসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এনসিপির রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। সংশ্লিষ্ট নেতাদের কারও কারও মতে, জুলাই-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের গড়া নতুন দলটি রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হলো। এখন দলটি কী কর্মকাণ্ড করে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। দলটি কী ধরনের ভূমিকা রাখে, তার ওপর নির্ভর করবে এর ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দল থাকা সত্ত্বেও দেশের গণতান্ত্রিক পথ মসৃণ করা যায়নি। এই প্রেক্ষিতের সাধারণ মানুষের প্রশ্ন: সত্যিই কি আরও একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন ছিল? এই রাজনৈতিক দলের হাত ধরে কি দেশের গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হবে? এই দলের নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের প্রায় সবাই গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন দলের নেতাদের সবাই বয়সে নবীন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও প্রাণশক্তিই তাদের প্রধান সম্বল। গণতন্ত্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন আশা করা যায় তাদের হাত ধরে গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হবে।
কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ বহু মত-পথ-বিভাজন রেখায় বিভক্ত। সুষ্ঠু-সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন দল-মত নির্বিশেষে সহনশীল একটি সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তোলা। নতুনদের পথ চলতে হবে নতুন দিনের আলোকে। পুরনো তিক্ততা ও কাদা ছোঁড়াছুড়ি তাদের বাদ দিতে হবে। আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ নানা সংকটের মধ্যে আছে। আভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে আছে আইনশৃঙ্খলার বিশৃঙ্খলা, আর আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যে আছে নানা ভূরাজনীতি। এনসিপি দলের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তারা কোনো দেশের তাঁবেদারি করবেন না। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তারা যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন তাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইতিবাচকভাবে বদলে যাক তা আমরাও চাই; কিন্তু তা হতে হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কোনোরকম জোরজবরদস্তি যেন তার মধ্যে না থাকে। তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডে যেন জনগণের অংশগ্রহণ থাকে। নতুন গঠিত দলের কতিপয়ের বক্তব্য ইতোমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সেকেন্ড রিপাবলিক এবং দলটির স্লোগান ইনকিলাব জিন্দাবাদ- এগুলো বলে দলটি কী বলতে চেয়েছে কিংবা ভবিষ্যতে কী করতে চাইছে তা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, দলটি মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী একটি মধ্যবিত্তের দল হিসেবে আবির্ভূত হবার আভাস দিয়েছে, যাতে প্রথাগত রাজনীতি পরিবর্তনের বার্তা আছে; কিন্তু এটি করতে দেশে যে রাজনৈতিক ঐক্য দরকার হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা তারা দিতে পারেনি।
আমরা নতুন রাজনৈতিক দলকে স্বাগত জানাই। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল ঘটুক নতুনদের হাত ধরে তাই চাই। তাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার হাত থেকে জনগণকে তাদের উদ্ধার করতে হবে। নতুন দল ও তরুণ প্রজন্ম বলে বলে তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বেশি থাকবে; ফলে তাদেরও চ্যালেঞ্জ থাকবে অনেক, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাক, বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু-সুন্দর-মসৃণ গণতান্ত্রিক পথ তৈরি করুক- তাই আমরা চাই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে