Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

এ কে আব্দুল মোমেন

পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় না

AK Abdul  Momen

এ কে আব্দুল মোমেন

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

ড. এ কে আব্দুল মোমেন একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিবিদ। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমানে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলমান ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান এবং তাতে বাংলাদেশ কী কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে, এসব বিষয়ে এ কে আব্দুল মোমেন কথা বলেছেন ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এ খালেক গিরীশ গৈরিক

ভিউজ বাংলাদেশ: ইরান-ইসরায়েল সামরিক সংঘাত চলছে। এই সংঘাতকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এ কে আব্দুল মোমেন:
সাধারণভাবে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা বড়ই কঠিন কাজ। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম থাকে, একটু কটু করে বলতে গলে কিছু মুনাফিকও থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর আকর্ষণ রয়েছে। কারণ পুরো মধ্যপ্রাচ্যই বিপুল সম্পদের ভান্ডার। সেই সম্পদের আকর্ষণে পশ্চিমা দেশগুলো সব সময়ই মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য তৎপর থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় না। তাই তারা মধ্যপ্রাচ্যে একটির পর একটি প্রক্সি ওয়্যার চালিয়ে রেখেছে। এ মুহূর্তে ইরান এবং ইসরায়েলের সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রথাগত যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি, সত্যি সত্যি ইরান এবং ইসরায়েল প্রথাগত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না। দেশ দুটি যদি সত্যি সত্যি প্রথাগত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেটা সবার জন্যই হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।

যুদ্ধের কারণে শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই সমস্যায় পড়বে তা নয়। উন্নত দেশগুলোও যুদ্ধের কারণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বেশি বিপদে পড়বে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পতিত হচ্ছে। আমরা এখনো ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করে চলেছি। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান-ইসরায়েল যদি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া আমাদের মতো অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুধু যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বিপাকে পড়েছে, তা নয়। ইউরোপের অনেক দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়েছে। এটা পরীক্ষিত যে, যুদ্ধ কখনোই মঙ্গল বয়ে আনে না। কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। যুদ্ধ শুধু মানুষের দুর্গতি বাড়ায়। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। এ জন্যই আমরা কখনোই যুদ্ধ চাই না।

ভিউজ বাংলাদেশ: ইরান-ইসরায়েল প্রথাগত যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ব-অর্থনীতিতে তার প্রভাব কেমন হবে বলে মনে করেন?
এ কে আব্দুল মোমেন:
ইরান-ইসরায়েল যদি সত্যি সত্যি প্রথাগত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হতে পারে। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি আবারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হবার কারণে বিশ্বব্যাপী যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে আবার যদি ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া আমাদের মতো অর্থনীতির জন্য খুবই কঠিন হবে। বাংলাদেশ হচ্ছে আমদানিনির্ভর একটি দেশ। আমাদের বেশির ভাগ পণ্যই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। চাইলেই আমরা রাতারাতি অভ্যন্তরীণভাবে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব না। ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ নিজস্ব উৎস্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারে না। পুরো জ্বালানি তেলের চাহিদা আমাদের আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হয়। আর বাংলাদেশ মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই জ্বালানি আমদানি করে থাকে। সেই অবস্থায় যুদ্ধ সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। জ্বালানি তেলে এবং এলএনজির দাম বাড়লে আমরা বড়ই কষ্টে পতিত হবো। কারণ সব জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আমাদের অর্থনীতিতে কী ধরনের আঘাত আসতে পারে?
এ কে আব্দুল মোমেন:
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই আমাদের অর্থনীতির বারোটা বেজেছে। দীর্ঘ দুবছরেও আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছি না। সুতরাং ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত আমাদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সত্যি সত্যি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তা শুধু ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সীমিত থাকবে না। বৃহত্তর পরিসরে যুদ্ধ হবে। অন্য অনেক দেশ এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়বে। সে ধরনের কিছু হলে আমরা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি তা ভেস্তে যাবে। সেই অবস্থায় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলাসহ অন্যান্য সামাজিক কাজগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কারণ আমরা দেখছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যুদ্ধের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় অর্থায়ন সংকট দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক সাহায্য অনুমোদন দিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে আরও সামরিক সহায়তা দেবে। ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভার মেটানোর মার্কিন সাহায্য প্রদানের কারণে দেশটির জনগণকে এখন আরও বেশি বেশি করে আয়কর দিতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, আরেকটি যুদ্ধ করার মতো অবস্থায় আমরা নেই। কাজেই যে কোনো মূল্যেই হোক যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, তা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিসির কারণে দেশটির জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ যুদ্ধ চায়, শান্তি চায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি বড় বড় দেশ যুদ্ধ চায়। তারা শান্তি চায় না। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই যুদ্ধ চায়। যুদ্ধ না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে অস্ত্র ব্যবসা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত অস্ত্র বিক্রি করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির বড় অংশটি আসে অস্ত্র ব্যবসা থেকে। কাজেই কোনো কারণে বিশ্বব্যাপী তাদের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের বেশির ভাগই অস্ত্র উৎপাদকদের অর্থে পরিচালিত হয়। কাজেই সিনেটে তারা অস্ত্র উৎপাদন ও বিক্রির পক্ষে সব সময় কথা বলে থাকেন। অস্ত্র উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়বে। আর সেটা হলে বিশ্বব্যাপী মার্কিন অধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা মাঠে মারা যাবে। মূলত এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শান্তি চাইতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শান্তি হচ্ছে আত্মঘাতী। ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চীন এরাও অস্ত্র বিক্রি করা দেশ। তাদের অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জিত হয় অস্ত্র বিক্রির অর্থ থেকে। ভারত বড় দেশ। তারা বিদেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় করে। আবার অস্ত্র বিক্রিও করে। অস্ত্র যারা উৎপাদন ও বিক্রি করে তারা কখনোই শান্তি চাইতে পারে না। কারণ অস্ত্র শান্তির কাজে ব্যবহৃত হয় না। অস্ত্র ব্যবহৃত হয় যুদ্ধের কাজে। কাজেই মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে তাতে শান্তি স্থাপিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং আগামীতে এই সংঘাত আরও ব্যাপকতা অর্জন করতে পারে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এক ধরনের নীতি অনুসরণ করছে। আর ইসরায়েলের ক্ষেত্রে অন্য ধরনের নীতি গ্রহণ করেছে। এর কারণ কি?
এ কে আব্দুল মোমেন:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেহারা তো এমনই। তারা সব সময় দ্বৈতনীতি অনুসরণ করে থাকে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে মাদক বিক্রি এবং সন্ত্রাসের কারণে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে এনকাউন্টারে ৪ জন মানুষ মারা গেছেন। এটা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড় বড় কথা বলে; কিন্তু তাদের দেশে গত কয়েক বছরে পুলিশ বিনাবিচারে ৩৯ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এটা নিয়ে তারা কোনো উচ্চবাচ্য করে না। এই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চেহারা। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনির গণহত্যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সমর্থন দিচ্ছে তাতে দেশটির লজ্জা হওয়া উচিত। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনি নির্বিচারে নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে। ইসরায়েলের এমন অমানবিক কর্মকে তারা প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে সমর্থন এবং সহযোগিতা দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র এবং অর্থ সহায়তা না পেলে ইসরায়েলের পক্ষে এমন নির্মমতা চালানো সম্ভব হতো না। ইসরায়েলি গণহত্যার সহযোগী হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাহেব। অন্য দেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; কিন্তু তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সবচেয়ে বেশি। মার্কিন প্রশাসন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আমি মনে করি, আমেরিকার এখন নিজেদের সংশোধন করার সময় এসেছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ইরান-ইসরায়েল প্রথাগত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে?
এ কে আব্দুল মোমেন:
আমাদের সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হবে। সেই অবস্থায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকবে। বিশেষ করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে থাকে। যুদ্ধ শুরু হলে এসব দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করা হয়। সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। জনশক্তি রপ্তানি খাতটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো নির্ভর। যুদ্ধ শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি নিশ্চিতভাবেই হ্রাস পাবে। পণ্য এবং জনশক্তি রপ্তানি কমে গেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাবে।

যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনীতি দুরাবস্থার মধ্যে আছে। যুদ্ধ শুরু হলে সেই কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি সৌদি আরব এবং আরও কয়েকটি দেশকে প্রস্তাব দিয়েছি যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে সব সময়ই এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করে তাই তোমরা বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারো। বাংলাদেশে যদি রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপন করা হয় তাহলে সেখানে জ্বালানি তেল পরিশোধন করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে পারবে। কারণ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকলেও এখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান রয়েছে। আরব দেশগুলো ইউরোপ ও আমেরিকায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ সঞ্চিত রাখে। কোনো কারণে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে তারা সেই অর্থ আটকে দেয়। কাজেই তারা ইচ্ছে করলে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ বাংলাদেশে সঞ্চিত রাখতে পারে। বাংলাদেশের কোনো ইচ্ছা এবং সামর্থ্য নেই এই টাকা আটকে দেবার জন্য। আগামীতে যে বিপদ আসছে সেই অবস্থায় আমরা কী করব সে ব্যাপারে আমাদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও বাজারভিত্তিক করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?
এ কে আব্দুল মোমেন:
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ভালো মন্দ দুধরনের প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমি মনে করি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করা প্রয়োজন। অর্থনীতির পরিভাষায় মনে করা হয়, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটলে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। তবে শুধু স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলেই যে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে সব ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। কারণ দেখতে হবে, আমাদের রপ্তানি করার মতো উদ্বৃত্ত পণ্য আছে কি না। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে কতটা প্রতিযোগিতা করতে পারবে সেটাও দেখতে হবে। তবে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটানো হলে আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা থাকে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এ মুহূর্তে উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ তার জ্বালানি খাতে এলএনজি আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ মূলত কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে থাকে। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকেও জ্বালানি আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কাজেই চীন থেকে জ্বালানি আমদানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। চীন বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে। আবার কিছু জ্বালানি রপ্তানিও করে। কাজেই আমরা এ নিয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করতে পারে। রাশিয়া থেকে আমাদের সরাসরি জ্বালানি তেল আনার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা রয়েছে। রাশিয়ান জ্বালানি তেল কিছুটা পিউরিফিকেশন করতে হয়। এটা আমরা করতে পারি না। ভারত রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল এনে তা পিউরিফাই করে বিদেশে রপ্তানি করে। একক সূত্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে আমাদের জ্বালানি তেল আমদানির নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আমাদের সময় দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
এ কে আব্দুল মোমেন:
আপনাদেরও ধন্যবাদ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ