Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

এমন মৃত্যু ও ধ্বংস কিসের আলামত?

AK Abdul  Momen

এ কে আব্দুল মোমেন

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট ২০২৪

দুনিয়ার বহু দেশে আন্দোলন হয়, বিক্ষোভ হয়। তখন সময় সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে, জেলে পাঠায়; কিন্তু কোথাও এত লোক মারা যায় না, কোথাও এতসব সরকারি ও বেসরকারি জানমাল, গাড়ি-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও হয় না, অফিস আদালত ধ্বংস হয় না। আমাদের দেশে এমনটি হয় কেন? আমাদের দেশের প্রতি কি কোনো ভালোবাসা নেই?

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাটি বড়ই দঃখজনক; কিন্তু এমনটি হবার কথা ছিল না। সরকার চায় কোটা পদ্ধতির সংস্কার। ছাত্রসমাজও তাই চায়। উভয়ের নীতিগত অবস্থান এক ও অভিন্ন। তাহলে এত গোলাগুলি, এত রক্তক্ষয়, এত সম্পদ, এত গাড়ি-বাড়ি, এত অফিস আদালত, মেট্রোরেল, ডাটা সেন্টার, ইত্যাদি ধ্বংস করে কার লাভ? দেশের ক্ষতি, জনগণের ক্ষতি এবং এ ক্ষতি পোষাতে অনেক অনেক মূল্য দিতে হবে। অনেক অনেক মা-বাবার স্বপ্ন ছেলেমেয়ে বড় হয়ে মানুষ হবে, দেশের সম্পদ হবে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে এবং দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে; কিন্তু কিতে কি হলো?

আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি তবে বিনা কারণে এমন মৃত্যু ও ধ্বংস কিসের আলামত? ছেলেমেয়েদের জেল-জুলুম দিয়ে মানুষের দুঃখ ও ক্ষোভ কি কমানো যাবে?

বিশ্বজুড়ে আমরা বদনামের ভাগী হলাম, সবাই তাজ্জব এমনটি কেন হলো! সম্প্রতি আমি লাওসে ‘আসিয়ান ও এশিয়ান রিজিওন্যাল ফোরামে’ (এআরএফ) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে বড় বড় দেশের প্রায় দেড় ডজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। বাংলাদেশ তো উন্নয়নের রোলমডেল ও স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্টলি তারা ছাত্র আন্দোলন দমন করতে পারলেন না কেন? এমনটি হওয়ার কারণ কী?

আমাদের ট্রাম্প কার্ড হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এবারে কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনে আমাদের অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেল। সবাই প্রশ্ন করছে তবে কি এই উন্নয়ন মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনেনি। কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ কি তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও হয়রানির বহিঃপ্রকাশ ঘটাল? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, প্রতিটি কাজে আমলাতান্ত্রিক হয়রানি, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, বিদেশে সম্পদ ও টাকা পাচার, পুলিশের হয়রানি ও সামাজিক বৈষম্য, জবাবদিহির অভাব ইত্যাদি মানুষের জীবনকে কি দুর্বিষহ করে তুলেছে? তাই এত উন্নয়নের পরও, এত মেগা প্রোজেক্ট সম্পন্ন হবার পরও মানুষের মনে অশান্তি, ক্ষোভ ও অস্থিরতা!

জামায়াত-শিবির-বিএনপি সুযোগের অপেক্ষায় অবশ্যই থাকবে। তবে তাদের এ সুযোগ আমরা কেন দিলাম? বস্তুত সিদ্ধান্তে সময়ক্ষেপণ ও ঠেলাঠেলি এবং অতিকথন জনগণ পছন্দ করেছে বলে মনে হয় না।

এখন জাতি ও নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন দোষারোপের মন মানসিকতা পরিহার করে খোলামনে আত্মোপলব্ধি, আত্মবিশ্লেষণ এবং সেই মতে উদ্যোগ নেয়া। তাহলেই আমরা এই দুঃখজনক ও অকল্পনীয় বিস্ফোরণের কারণ যেমন জানতে পারব, সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারব। জাতি ও নেতৃত্বের জন্য এ এক বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে আমরা ভাগ্যবান, আমরা এক নেতা পেয়েছি, যিনি সব প্রলোভন, সব ভয়ভীতি, সব হিংসা-বিদ্বেষ, সব চাপের মুখে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত। তবে সঠিক তথ্য (বাহবা পাওয়ার তথ্য নয়) ও সঠিক সুপারিশ গ্রহণের জন্য প্রয়োজন জনগণের সঙ্গে আরও অধিকতর সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ বাড়ানো।

আমাদের এতসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে এবং স্বাভাবিকভাবেই এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ হবে, জ্বালাও-পোড়াও হবে তার কিছুই কি তারা টের পায়নি? কেন?

যারা মারা গেছে বা আহত হয়েছে, তাদের ভালোমন্দ দেখভাল করা আমাদের দায়িত্ব এবং বিশেষ করে সারা দেশে স্কুল-কলেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সম্পদ যাতে আগামীতে কেউ ধ্বংস না করে তার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালু করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন: সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ