ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস কিসের লক্ষণ?
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের হার বাড়ানো সত্ত্বেও উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকরা এখন আর আগের মতো ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণ করছেন না। গত মার্চ মাসে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতের প্রবৃদ্ধি সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। এই সময় আমানতের প্রবৃদ্ধ হয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এটা গত ৫ মাসের মধ্যে আমানত প্রবৃদ্ধির সর্বনিম্ন অবস্থা। আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ব্যাংকে রক্ষিত তাদের আমানতকৃত অর্থ তুলে নিচ্ছে। গত মার্চ মাসে আমানতকারীরা সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছে।
এ নিয়ে গত ৫ মাসে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আমানতকারীরা ১৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক আমনতের উপর ৯ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে; কিন্তু তারপরও আমানত প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং সেক্টরে সার্বিকভাবে আমানতের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে আমানতের স্থিতির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ২৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
ব্যাংকিং সেক্টরের আমানত প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী গতিধারা অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত সংরক্ষণের মন্থর গতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কারণ এটা ব্যাংকিং সেক্টরের দুরাবস্থার সুষ্পষ্ট লক্ষণ। ব্যাংক সাধারণ অন্য সব ব্যবসায়ের মতো নয়। ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালিত হয় আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থের ওপর ভিত্তি করে। তাই কোনো কারণে সাধারণ গ্রাহক যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে তারা আমানত প্রত্যাহার করে নেয়। এবং একই সঙ্গে নতুন করে আমানত সংরক্ষণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ব্যাংক ব্যবসায়ের মূল পুঁজি হচ্ছে গ্রাহক এবং আমানতকারীদের নিরঙ্কুশ আস্থা এবং বিশ্বাস। কোনো কারণে ব্যাংকের ওপর সাধারণ আমানতকারীর আস্থা নষ্ট হয়ে গেলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংক টাকা সঞ্চয় করার চেয়ে বাড়িতে টাকা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এটা ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাবার একটি অন্যতম কারণ।
যাদের কাছে উদ্বৃত্ত অর্থ আছে তারা ব্যাংকে সেই অর্থ সংরক্ষণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যাংক হচ্ছে নিরাপত্তা এবং আস্থার প্রতীক; কিন্তু সেই আস্থায় যদি ভাঙ্গন ধরে তাহলে তারা ব্যাংকে উদ্বৃত্ত অর্থ সংরক্ষণের আগ্রহ নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে ফেলবেন। কিছু মানুষ আছেন যারা সামান্য সুদ পেলেও ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণ করবেন। যেমন যারা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী তারা তাদের রিটায়ার্ড বেনিফিট নিজের নিকট না রেখে ব্যাংকে সংরক্ষণ করে থাকেন। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব যে কোনো টাকা ধার চাইতে পারেন। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য হলেও তারা প্রাপ্ত অর্থ নিজের নিকট না রেখে ব্যাংকে সংরক্ষণ করবেন।
ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে মন্থর গতি সৃষ্টি হয়েছে তা সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। এর পেছনে গুরুতর নানা কারণ কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অদূরদর্শী নীতিমালা আমানত সংরক্ষণে নিম্নগতির কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর নামে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে আমানতের ওপর সর্বোচ্চ সুদ হার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের বেলায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এখানে প্রণীত বিধিমালার একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানতের ওপর প্রদেয় সর্বোচ্চ সুদ হার সাড়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ছিল ৬ শতাংশ। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্যই এটা করা হয়। এ ছাড়া একই ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আমানত সংরক্ষণের হার ৫০ শতাংশ করা হয়।
আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থের ২৫ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে পারতো। ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করাটাই ছিল একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকিং সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে সংরক্ষণ করে বিপাকে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করার ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ তুলনামূলক সস্তা হয়ে যায়। এই অবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে তা নির্ধারিত খাতে ব্যবহার না পরিবর্তে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। ফলে বাজারে অর্থের প্রবাহ প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে বৃদ্ধি পায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) পলিসি রেট (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণকালে সিডিউল ব্যাংকগুলো যে সুদ প্রদান করে) বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের আপনা-আপনি তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। ঋণ গ্রহীতারা ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন করে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা পলিসি রেট বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বারবার বৃদ্ধি করলেও ব্যাংক ঋণের সুদের (ব্যাংক উদ্যোক্তাদের ঋণদানকালে যে সুদ চার্জ করে) সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশই নির্ধারণ করে রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট সাড়ে ৮ শতাংশ। আগে এটা ছিল ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি চিহ্নিত মহলের স্বার্থ রক্ষায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কিছুদিন আগ পর্যন্তও ৯ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতির উচ্চ প্রবণতা বহমান থাকে। অন্যদিকে আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখার কারণে আমানতকারীরা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ সেই সময় আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের হার সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতির চেয়ে অনেক কম ছিল। অনেকেই বলছেন, মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ সংরক্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তারা ব্যাংকে অর্থ আমানত আকারে সংরক্ষণ করছেন না। এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অপ্রয়োজনে কেউ বাড়িতে অর্থ সংরক্ষণ করে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এবং আর্থিক সামর্থ উভয়ই কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ অর্থ সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। তারা সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে ব্যাংকে সঞ্চিত আমানতকৃত অর্থ উত্তোলন করে ব্যবহার করছে। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। হয়তো কোনো ব্যক্তির মাসিক বেতন ১ লাখ টাকা। তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের হার হচ্ছে ৫ শতাংশ। তাহলে বছর শেষে তার বেতন দাঁড়াবে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা; কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১০ শতাংশ। তাহলে তার আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে যে ৫ হাজার টাকার ব্যবধান তা তিনি কীভাবে মেটাবেন? তার যদি কোনো ব্যাংক আমানত থাকে তা উত্তোলন করে প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করবেন। একজন মানুষের প্রকৃত আয় যতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যয়ের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বাড়ছে। ফলে তাদের পক্ষে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পর সঞ্চয় করার কথা চিন্তা করাটাও কঠিন। অর্থাৎ সামর্থ্যের অভাবের কারণে মানুষ আর আগের মতো অর্থ সঞ্চয় করতে পারছে না।
আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরে বড় বড় কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর কোনো সঠিক বিচার হয়নি। কয়েক মাস আগে ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা নামে বেনামে ঋণ গ্রহণের আড়ালে ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এই ঘটনা প্রকাশিত হবার পর অনেকেই তাদের আমানত ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেয়। সরকারের একজন দায়িত্বশীল সচিব এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, গুজবের কারণে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে গ্রাহকরা ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এই ৫০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে কত টাকা পুনরায় ব্যাংকে ফেরত এসেছে তা আমরা জানতে পারিনি। যে ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তারা অর্থ নিয়েছে তাদের কোনো বিচার হয়নি। বরং নানাভাবে বিচারিক কার্যক্রমকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর থেকে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থাকে অনেকাংশেই ধ্বস করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই কাউকে খুশি করার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এসব ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবে তেমনটি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এটা কি একীভূতকরণ নাকি অধিগ্রহণ তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে সম্মত নয়। আবার একটি ব্যাংক একীভূতকরণের প্রাথমিক পর্যায়েই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নতুন পরিচালনা বোর্ড নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শোনা যাচ্ছে এই ব্যাংকটি একীভূতকরণ করা হবে না। তাহলে অন্যগুলোর ব্যাপারে একই পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না? ব্যাংক একীভূতরকরণের নামে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে পুরো ব্যাংকিং সেক্টরে। এই অবস্থায় আমানতকারীরা দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ব্যাংকগুলোতে নতুন করে আমানত সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ তো নেবেই না বরং আগে থেকে যে আমানত সংরক্ষিত আছে তা তুলে নেবার চেষ্টা করবে।
ব্যাংকিং ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে এই সেক্টরে সঞ্চিত পর্বত প্রমাণ খেলাপি ঋণের উপস্থিতি। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য দৃশ্যত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি প্রথমবারের মতো ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে; কিন্তু অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কি আসলেই খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আন্তরিত নাকি তারা কাউকে খুশি করার জন্য এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে স্ববিরোধিতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান ব্যক্তি করেছেন; কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেরাই নতুন করে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির রাস্তা সুগম করে দিচ্ছে।
আগে নিয়ম ছিল, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি প্রকল্প ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে অবশিষ্ট প্রকল্পগুলো ব্যাংক ঋণ পাবার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতো। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করেছে যে, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি প্রকল্প ঋণ খেলাপি হলেও অবশিষ্ট প্রকল্পের অনুকূলে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কি বলতে পারবেন এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাবে না বৃদ্ধি পাবে? আগের নিয়মে শিল্পগোষ্ঠীর মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টির সুযোগ ছিল এখন তা প্রত্যাহার করা হলো। সার্বিক দিক দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টর যে পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তাতে আগামীতে এই খাতের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে