Views Bangladesh Logo

কী রোমাঞ্চ জমিয়ে রেখেছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ?

প্রায় আট দশক আগে প্রকাশিত এক সাময়িকীতে ভারতে জন্ম নেয়া ইংলিশ লেখক জর্জ অরওয়েল লিখেছিলেন, ‘সিরিয়াস স্পোর্টস ইজ ওয়্যার, মাইনাস দ্য শুটিং।’ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ক্ষেত্রে তার কথাটি বেশ মানানসই। কেননা এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল মাঠে নামলে, সেটি শুধু মাঠের লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না। মহারণে রূপ নেয়। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়েই খেলেন দুদলের খেলোয়াড়রা। এটি যে সম্মান অর্জনের লড়াই, মান রক্ষার লড়াই। এ ম্যাচ ঘিরে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকের মধ্যেও বাড়তি উত্তাপ-উত্তেজনা কাজ করে। এমন স্নায়ু ক্ষয়ী আগুনে ম্যাচের অপেক্ষায় থাকে পুরো ক্রিকেট বিশ্বও।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ৩টায় বহু প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্ক্ষিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শুরু হবে।এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন বৈরী দুই দেশের লড়াই বাড়তি আবেদন তৈরি করেছে। অবশ্য এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো- অন্যসব দল পাকিস্তানে গিয়ে টুর্নামেন্ট খেলতে রাজি হলেও কোনো ভাবেই নড়ানো যায়নি ভারতকে। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ‘হাইব্রিড মডেল’ এ চ্যাম্পিয়স ট্রফি আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

শুধু তাই নয়, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অধিনায়কদের ফটোসেশনে অংশ নেয়নি ভারত। পাকিস্তান সফর বাতিল করা হয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার। দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলে এমন পরিস্থিতি হয়? তাছাড়া আয়োজক হয়েও ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে গিয়ে ম্যাচ খেলছে পাকিস্তান। নানা জটিলতা পেরিয়ে আবার এক মঞ্চে হাজির হওয়ায় দুদলের ম্যাচটি বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ম্যাচের টিকিটের চাহিদাও আকাশচুম্বি।

চলতি মাসের শুরুতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট ছাড়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়! কেউই এ ম্যাচ মিস করতে চান না। ফুটবলের এল ক্লাসিকোর মতোই যেন ভারত-পাকিস্তান লড়াই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর পেছনের কারণ হলো- প্রায় এক দশক ধরে এই দুই দেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ। শুধুমাত্র বৈশ্বিক আসরেই দেখা হয় তাদের। সর্বশেষ ২০০৮ সালে এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল।

২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর বেশ কিছু বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে ছিল পাকিস্তান। ওই একই বছর মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ভাটা পড়ে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ভারত সফরে যায় পাকিস্তান। এরপর থেকেই দুই দলের আর কোনো দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ হয়নি।

অতীতে ফিরলে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর শান্তি ফিরেনি ভারত ও পাকিস্তানে। বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি। এর প্রভাব বেশ ভালো ভাবেই পড়ে ক্রিকেটের ওপরও। রাজনৈতিক এই বৈরিতার কারণেই ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে বাহ্যিক উত্তাপ ছড়ায়। যেকারণে দুদলের ম্যাচ ক্রিকেট বর্ষসূচিতে সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা পায়।

সর্বশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপে ওয়ানডে ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। এ পর্যন্ত দুদল ১৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের জয় ৭৩টি আর ভারতের ৫৭টি। ৫টি ম্যাচের ফল হয়নি। দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ বন্ধ হওয়ার পর আইসিটি টুর্নামেন্ট ও এশিয়া কাপে মোট ১১টি ম্যাচ খেলেছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে। ৮টি ম্যাচেই জয়ের রেকর্ড ভারতের। একটি ম্যাচের ফল হয়নি।

ভারতের বিপক্ষে নিকট অতীত রেকর্ড উজ্জ্বল না হলেও পাকিস্তানের একটি দারুণ সুখস্মৃতি আছে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তানিরা। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার জায়গা। আট বছর আগে দাপট দেখালেও এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চাপে পড়ে গেছে দলটি। এবার একে তো ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। তারপর ঘুরে দাঁড়ানো ও ভালো পারম্যান্স শো করার চ্যালেঞ্জ থাকছে মোহাম্মদ রিজওয়ানদের।


এ দিক থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেয়ে দারুণ ছন্দে আছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি। তাছাড়া প্রথম ম্যাচের ভেন্যু দুবাইয়েই যে ম্যাচ। ফলে ভারতের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকবে। তবে দুবাইয়ের মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কী রোমাঞ্চ জমিয়ে রেখেছে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ