যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে কী ভাবছে ভারত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় অবশেষে শনিবার যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান দু-দেশ। ফলে চার দিনের সামরিক উত্তেজনার পর স্বাভাবিক হয়ে গেল দুদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি। তবে এই আবহে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর কি ভারত এবার ‘সিন্ধু জলচুক্তি’ও মেনে নেবে? এ বিষয়ে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আপাতত যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনই ‘সিন্ধু জল চুক্তি’ মেনে নেবে না ভারত। ভারতের সিদ্ধান্তের বদল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত তাড়াতাড়ি সিন্ধুর জল আটকানো সম্ভব নয়। সেটা পরিকাঠামো তৈরি করতে গেলে অনেক সময়সাপেক্ষ ও যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাহলেও প্রশ্ন উঠছে সিন্ধু-সিদ্ধান্ত কি ভারত প্রত্যাহার করবে? এ বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক কোনো মন্তব্য করেনি এখনো। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক আধিকারিকের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘর্ষ বিরতি আলোচনায় সিন্ধু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
মনে করা হচ্ছে, এই নিয়ে ভারতের যে অবস্থান তা বহাল থাকবে। অর্থাৎ, সিন্ধুচুক্তি স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তা আপাতত বহাল থাকছেই। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জলমন্ত্রকের একটি সূত্র উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সিন্ধুচুক্তির বিষয়ে কোনোরকম আলোচনাই হয়নি।
উল্লেখ্য, টানা নয় বছর ধরে আলোচনার পর ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান চুক্তিতে সই করেছিলেন। চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই জল ব্যবহার করলেও কোনো পরিস্থিতিতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না।
সেই চুক্তি স্থগিত করা নিয়ে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে অনেকে মনে করেছিলেন, চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা করে ভারত আদপে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল। কারণ, এর আগে ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯ সালের যুদ্ধেও এই জল চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করা হয়নি কখনো।
ফলে এই সিন্ধু জলচুক্তি ভারত বাতিল করলে পাকিস্তানের কৃষি ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ, পাকিস্তানের ঝিলম, চেনাব, রবি, বিয়াস এবং সাতলুজ নদীগুলো সিন্ধু নদের জলের ওপরে নির্ভর করে। তাই সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দেয়া হলে পাকিস্তানের কৃষিজমি কার্যত খরার মুখে পড়বে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সেই নির্দেশিকা তুলে নিয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের আকাশসীমা ফের খুলে দিয়েছে তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে