Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

মেগাফোন কূটনীতি কী

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ত শুক্রবার ‘ইউনূসের মেগাফোন কূটনীতি ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’, এই শিরোনামে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর থেকেই এই ‘মেগাফোন কূটনীতি’ বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

কী এই মেগাফোন কূটনীতি?

কোনো রাষ্ট্র বা তার প্রতিনিধি যখন গোপন বা আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরিবর্তে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বা জনসমক্ষে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে বক্তব্য দেয় সেটাকেই মেগাফোন কূটনীতি (Megaphone diplomacy) বলে। এটি করার উদ্যেশ্য, চাপ প্রয়োগ বা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করা। যাতে সমঝোতার পরিবর্তে নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরা যায়। এই ধরনের কূটনৈতিক কার্যক্রমে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা না করে, মিডিয়ার মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে পরস্পরের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।

‘মেগাফোন’ প্রকৃত অর্থে একটি যন্ত্র, যা মানুষের কণ্ঠস্বরকে উচ্চমাত্রায় বাড়িয়ে জনসমক্ষে পৌঁছে দেয়। এই ধারণা থেকে ‘মেগাফোন কূটনীতি’ শব্দটি এসেছে।

মেগাফোন কূটনীতি শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থান নির্ধারণ করা কঠিন। তবে এই ধারণাটি ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশক থেকে কূটনৈতিক প্রসঙ্গে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে বলে জানা যাচ্ছে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ূ যুদ্ধ চলছিলো তখন। দুই পক্ষই একে অপরের ঘোর শত্রু ছিল। সেসময় একে অপরকে হুমকি দিতে দুই পক্ষই এমন পদ্ধতি বেছে নিতো। মূলত গণমাধ্যমের প্রসার এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা মেগাফোন কূটনীতির বিস্তারের কারণ।

মোট কথা দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা না করে, মিডিয়ার মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে পরস্পরের উপর চাপ সৃষ্টি করায় এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য। লক্ষ্য নিজেদের অবস্থানকে জোরালো করা, জনমতকে প্রভাবিত করা। আর এতে কখনও কখনও বিরোধী পক্ষ প্রকাশ্যে বিব্রত হয়ে ওঠে। যেমনটি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের ক্ষেত্রে।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইউনূস। সেখানে দিল্লিতে থাকার সময় শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। দীর্ঘ ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে দেশ ও বিশ্ব মিডিয়ায় চলছে বিশ্লেষণ। ভারতের সাবেক কূটনীতিকরা এটিকে ‘মেগাফোন কূটনীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ তিনি সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনার পরিবর্তে মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতকে জানিয়েছেন, দিল্লিতে থাকার সময় শেখ হাসিনাকে যেন রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়। তারা বলছেন, ইউনূসের এধরণের বক্তব্যে বিব্রত হচ্ছে ভারত।

ইউনূস ছাড়াও তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর বিভিন্ন সদস্য বন্যা এবং ইলিশ মাছ রপ্তানি ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানালেও দেশটির কর্মকর্তারা ‘হতাশ’ বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কী ঘটছে সেগুলোর দিকে ভারত নজর রাখছে এবং ঢাকা থেকে সরকার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কী ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছে সেগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখছে।’ এটাও মেগাফোন কূটনীতির একটি উদাহরণ। কারণ, ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া তারা মিডিয়ায় না জানিয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় জানাতে পারতো।

অর্থাৎ দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না করে, মিডিয়ার মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে পরস্পরের উপর চাপ সৃষ্টি করাই মেগাফোন কূটনীতি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ