আমি যখন নায়ক ছিলাম
আমি একবার আমারই লেখা একটি নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। করেছিলাম না বলে করতে বাধ্য হয়েছিলাম বলাটাই সঠিক হবে।
ওই নাটকের প্রযোজক আমাকে বলেছিলেন, আপনি নিজে এ নাটকে নায়ক হতে রাজি থাকলে আমি নাটকটি করব। আর আপনি যদি নাটকে নায়ক হতে রাজি না হন, তবে আমি এই নাটকটি করব না।
আমি বললাম, আমি তো পারব না এরকম একটা জটিল চরিত্রে অভিনয় করতে। আমার তো নাটক করার অভিজ্ঞতা নেই।
মোমিনুল হক মুচকি হেসে যা বলেছিলেন, তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। হয়তো মৃত্যুর পরও মনে থাকবে।
তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘আপনি যে পারবেন না, তা কি আমি বুঝি না?’
আমি বললাম, তবে?
তিনি বললেন সবাই তো পারে। আপনি না হয় পারলেন না। ওটাই, মানে আপনার এই না-পারাটাই হবে আমার নাটক।
শেষ পর্যন্ত টাকার লোভে আমি আমার নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাই।
১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি নাটকটি তৎকালীন পিটিভিতে (বর্তমানে বিটিভি) লাইভ প্রচারিত হয়েছিল। তখন নাটকের প্রিরেকর্ডিং ব্যবস্থা ছিল না। নাটক, কথিকা, গান, খবর সবই হতো লাইভ।
মঞ্চ নাটকের কথা বাদ দিলে আজকালকার টিভি ও সিনেমার অভিনেতারা তা ভাবতেই পারবে না। নাটকটির নাম ছিল, ‘আপন দলের মানুষ’। মোমিনুল হকের পরামর্শে আমারই লেখা একটি গল্পকে নাট্যরূপ দিতে হয়েছিল আমাকেই। ওই নাটকে আমার নায়িকা ছিলেন ডলি আনোয়ার।
ডলি আনোয়ার ছিলেন ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে; কিন্তু সে ডলি ইব্রাহিম নামেই বেশি পরিচিত। তখনকার হার্টথ্রব নায়িকা।
সেই থেকে ডলির সঙ্গে আমার প্রকাশ্য পরিচয় ও গোপন প্রণয় চলমান ছিল।
চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় আরও পরে। আনোয়ার আমার ছবি তুলেছিল অনেকবার। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আনোয়ার ডলিকে বা ডলি আনোয়াকে বিয়ে করেন। জেনে ভালোই লেগেছিল আমার, যাক ডলি অবশেষে সুপাত্রে পড়েছে।
আনোয়ারের একটি ছোট ভাই আমেরিকায় থাকত। নাম ইকবাল হোসেন। ১৯৯১ সালে ইকবালের বোস্টনের বাড়িতে আমি কয়েকদিন থেকেছি। প্রথমে ডলি, পরে আনোয়ার ও সম্প্রতি ইকবাল মারা গেছেন।
আমার ওই টিভি নাটকের পরিচালক প্রযোজক ছিলেন মোমিনুল হক। তিনি আমেরিকায় থাকেন। একবার নিউ ইয়র্কে দেখা হয়েছিল।
আশা করি, তিনি আছেন এবং ভালো আছেন।
সম্প্রতি চিত্রগ্রাহক আনোয়ারের পাশে অভিনেত্রী ডলিকে দেখে আমার ‘আপন দলের মানুষ’ নাটকের নায়িকা ডলিকে খুব খুব মনে পড়ল। আনোয়ারকেও মনে পড়ল। তবে ডলির তুলনায় কম।
নাটকের মধ্যে হলেও একবার তো ডলি আমার হাতে হাত রেখেছিল এবং আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে, চোখে চোখ রেখে আমার সংলাপ ভুলে গিয়েছিলাম। সে এক কাণ্ড বটে।
ওই নাটক দেখে চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবীর তখনকার চালু সাপ্তাহিক 'Express'-এ লিখেছিলেন, ''Last Sunday's Goon show. He wrote...' Goon acted well when he kept his mouth shut."
চিত্রশিল্পী সৈয়দ ইকবালকে ধন্যবাদ জানাই, একই সঙ্গে আনন্দ ও দুঃখ জাগানিয়া ছবিগুলো আমার চেখের সামনে আনার জন্য।
লেখক: কবি
৬ ডিসেম্বর ২০২৩
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে