Views Bangladesh Logo

গ্যাস সংকটে সরকারের যদি কিছু করার না থাকে ভুক্তভোগীরা কোথায় যাবে?

ত প্রায় ১৫ দিন ধরে রাজধানীর বেশিরভাগ বাসাবাড়ির রান্না হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুলায়। যারা বৈদ্যুতিক চুলা কিনতে পারছেন না, তারা হয় মাটির চুলায় রান্না করছেন, না-হয় বাইরে থেকে খাবার কিনে আনছেন। গ্যাসের এমন তীব্র সংকট রাজধানীবাসী ইতোপূর্বে কখনো অনুভব করেনি। রাজধানীর সঙ্গে এরকম গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছে অন্যান্য জেলাগুলোয়ও। কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের ব্যাপক সংকটে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক জায়গায় দিনের বেলায় গ্যাস থাকছে না। রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছেন না শিল্পের গ্রাহকরাও। ফলে রপ্তানিমুখী কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়োগের উৎসাহ পাচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে গ্যাসের জন্য হাহাকার ও ভোগান্তি ততই বাড়ছে।

গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সুসংবাদ তো নেই-ই, গ্যাস সংকটে সামনে ভোগান্তি আরও বাড়বে। সাধারণত শীতের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যায়। এতে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা কমে যায়। ফলে শিল্প, আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এবার গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন টানা কমছে। ফলে শীতেও গ্যাস সংকট ভোগাচ্ছে গ্রাহকদের। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, সামনে এটি আরও ভোগাবে।

দিনে এখন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হলে পরিস্থিতি সামলানো যায়। তবে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো। ২০১৮ সালের পর থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে যায় গত আওয়ামী লীগ সরকার। নতুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোয় তেমন জোর দেয়া হয়নি। ফলে উৎপাদন কমে এখন ১৯৩ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। গত বছরও এটি ২০০ থেকে ২১০ কোটি ঘনফুট ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতা এর জন্য দায়ী। সর্বোচ্চ মজুত থাকার পরও কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে তিতাস ও কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো যায়নি। অথচ কম মজুত থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে কয়েক গুণ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।

সমস্যাগুলো আমরা জানি, কিন্তু সমাধানের উপায় জানি না। সত্যিই কি বাংলাদেশ গ্যাস সংকট থেকে সহসা মুক্তি পাবে? যদি না পায় তাহলে কী হবে? বাসাবাড়িতে তো রান্না করে খেতে হবে। সবার পক্ষে বৈদ্যুতিক চুলা কেনা সম্ভব না। তা ছাড়া, বৈদ্যুতিক চুলায় বিদ্যুৎ বিলও উঠে মাত্রাছাড়া। এই খরচ সবাই পোষাতে পারবে না কোনোভাবেই। ঢাকার উচ্চ ও ঘন দালানকোঠায় মাটির চুলায়ও সব সময় রান্না করা সম্ভব না। প্রতিদিন তিনবেলা বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়া তো আরও অসম্ভব। তাহলে কোথায় যাবে ঢাকাবাসী?

আগামী কয়েক বছরেও সমুদ্রে গ্যাস আবিষ্কারের সুযোগ নেই। স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে তেমন গতি নেই। পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রে নতুন কূপ খনন করে উৎপাদন বাড়ানোর কাজ চলছে ধীরগতিতে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি কূপ খননের কথা থাকলেও তিন বছরে হয়েছে মাত্র ১৬টি। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। উৎপাদন কমছে, এলএনজি আমদানির সক্ষমতাও সীমিত; আবার এলএনজির দামও বাড়তির দিকে। দেশে উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া কোনো সমাধান নেই। তাই অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো দরকার।

তার মানে, এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে গ্যাস সংকট দূরীকরণে সরকারের অতিশীঘ্রই কিছু করার নেই। তাহলে জনগণ কী করবে? যে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা শহরে বা রাজধানীর আশপাশে বাস করে তারা কোথায় যাবে? এই উত্তর কে দেবে? গ্যাস সংকট নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যে বিপর্যয় আসছে তা ভুক্তভোগীরা কীভাবে সামাল দেবে তার উত্তর তো সরকারকে দিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ