চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যাবেন কারা?
পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌথভাবে চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি টুর্নামেন্ট এখন শেষের দিকে। আর দুই ম্যাচ পরই বহু আকাঙ্ক্ষিত ফাইনাল। ৯ মার্চ পাকিস্তান কিংবা আমিরাতের মাঠে হবে এই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি। ভারত ফাইনালে উঠলে ম্যাচটি হবে দুবাইয়ের মাঠে। আর যদি তারা সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেন তাহলে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটি হবে পাকিস্তানের মাঠে। সেমিফাইনালের লড়াই শেষে যেমন চূড়ান্ত হবে ভেন্যু, ঠিক তেমনি ফাইনালের দল দুটিও। সেরা চারটি দলই সেমিফাইনালে এসেছে। ৪ মার্চ দুবাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং ৫ মার্চ লাহোরে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড পরস্পরের মুখোমুখি হবে। এই চারটি দল থেকে ফাইনালের টিকিট পাবেন কারা?
অতীতে দুইবার করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স বিচার করলে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দুই দলের মধ্যে জম্পেশ লড়াই হবে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই টপ ফেভারিট হিসেবে খেলছে ভারত। ‘এ’ গ্রুপ থেকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে শেষ চারে উঠেছে দলটি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ ভালোভাবেই জিতেছে ভারতীয়রা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে লড়াই হলেও ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতাই জমিয়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। একপেশে ম্যাচ জিতেছে রোহিত শর্মার দল। তাদের ব্যাটারদের চেয়ে বোলাররা ভালো ফর্মে আছেন। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই ভারতীয় ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে কোনো দলই স্কোর আড়াই শ’র ঘরে নিয়ে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ ম্যাচে মোহাম্মদ শামি গতির ঝড় তুলে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতীয় স্পিনাররা রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বরুণ চক্রবর্তী ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে তার লেগ স্পিনের শক্তির দাপট বুঝিয়ে দেন। সব মিলে এই বোলিং অ্যাটাক অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক।
উপমহাদেশের দলের বিপক্ষে খেলতে নেমে স্পিনে কাবু হওয়ার ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন কিছু নয়। অবশ্য সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে কীভাবে খেলতে হয়, সেটি বেশ ভালোভাবে জানা আছে অস্ট্রেলিয়ানদের। গত বিশ্বকাপে ট্রাভিস হেড ব্যাট হাতে একাই ফাইনাল ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। ভারতের দুর্বলতার জায়গায় হলো-যে তিনটি ম্যাচ গ্রুপ পর্বে তারা খেলেছে, কোনোটিতেই বড় স্কোর তাড়া করে জিততে হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে রানের ম্যাচ হবেই বলে ধরা হচ্ছে। অন্যদিকে টুর্নামেন্টে সেরা পেস বোলিং অ্যাটাক ছাড়াই খেলছে অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালে কামিন্স, হ্যাজলউড, স্টার্কদের মিস করতে পারে দলটি। তবে ব্যাটিংয়ে বলিয়ান অজিরা। ‘বি’ গ্রুপে রানার্সআপ হয়ে সেমিফাইনালে খেললেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাড়ে তিন শ রান তাড়া করে রেকর্ড জয়ে টুর্নামেন্টে যাত্রা করে অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টির বাধায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের ফল না হলেও ব্যাটিংয়ে যে দুর্দান্ত সূচনাটা করেছিলেন হেডরা, সেটিই ভারতকে ভাবনায় ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলেও অস্ট্রেলিয়ার পাওয়ার ব্যাটিংই দেখা যেতো বলে আলোচনা হচ্ছে অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন দলের মতোই খেলছে অস্ট্রেলিয়া। তবে কন্ডিশন শক্তি আর সামর্থ্যের বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে ফাইনালের দৌঁড়ে এগিয়ে যেতে পারে ভারতই।
এদিকে ফাইনালের দৌঁড়ে নানা দিকে বিবেচনা করে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে নিউজিল্যান্ডকে কিছুটা এগিয়ে রাখা যেতে পারে। তাদের ম্যাচটি হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। এরইমধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় শিরোপা জয়ের পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও হট ফেভারিটের মতো খেলছে নিউজিল্যান্ড। সবচেয়ে বড় কথা হলো-নির্বাসন থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার পর সেখানে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের দখলে। উপমহাদেশের মাঠে কীভাবে সফল হতে হয়, সেই ধারণা কেন উইলিয়ামসনদের চেয়ে আর কারো বেশি জানার কথা নয়। আর দল হিসেবে যদি দেখেন, ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দারুণ ভারসাম্যপূণ্য একটি দল নিউজিল্যান্ড। এই দলটির দুর্বলতা খুঁজে বের করা কঠিন।
‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সেমিফাইনালে খেললেও দলটি দারুণ আশা জাগানিয়া। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ যেভাবে সহজ করে জিতেছে দলটি, তাতে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দক্ষিণ আফ্রিকার বদনাম হলো-তারা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ‘চোক’ করে। টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো খেলে সেমিফাইনালে এসে আর পারে না দক্ষিণ আফ্রিকা! এখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করবে প্রোটিয়ারা। ‘বি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে এসেছে দলটি। তারা অপরাজেয় এখনো। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদি তারা দল হিসেবে পারফরম্যান্স শো করতে পারে তাহলে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে টেম্বা বাভুমার দলটি। এই ম্যাচটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে