Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

এই রিয়ালকে থামাবে কে?

Mahabur Rahman Mir

মাহাবুর রহমান মীর

মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

ত কয়েক বছর ধরে কিলিয়ান এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার কত গুঞ্জনই না ভেসে বেড়িয়েছে বাতাসে। তবে এবার আর গুঞ্জন নয়, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এমবাপ্পে যোগ দিচ্ছেন রিয়ালে। এই ফরাসি তারকার রিয়ালে যোগদানের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে খোদ রিয়াল মাদ্রিদই। সোমবার (জুন ৩) আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে রিয়াল জানিয়েছে, আগামী পাঁচ মৌসুম রিয়ালের জার্সি গায়ে মাতাবেন এমবাপ্পে।

২৫ বছর বয়সী এমবাপ্পে এমন একটা সময়ে রিয়ালে যোগ দিচ্ছেন, যখন চারদিকে এই ক্লাবটিরই জয়জয়কার। এবার স্প্যানিশ সুপার কাপ ও স্প্যানিশ লা লিগা জয়ের পর ইউরোপের শ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাও ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সদ্য সমাপ্ত এই মৌসুমে জুড বেলিংহাম, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রোদ্রিগো, কামাভিঙ্গা, মদ্রিচ, ক্রুসদের নিয়ে গড়া দলটির কাছে নাকাল হয়েছে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো। ১৫তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার উৎসব শেষ হতে না হতেই রিয়াল সমর্থকরা পেলেন এমবাপ্পের আগমনের খবর।

ব্যক্তিগত পারফরমেন্স বিবেচনা করলে এই এমবাপ্পেই এখন বিশ্বসেরা ফুটবলার। ২০২৩-২৪ মৌসুমেও ক্লাব পর্যায়ে তিনি করেছেন ৪৪টি গোল, পাশাপাশি রয়েছে ১০টি অ্যাসিস্ট। রিয়ালের দুই বড় তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহাম মিলে করেছেন ৪৭ (২৪+২৩) গোল। এতেই বোঝা যায়, কেমন ফর্মে রয়েছেন এমবাপ্পে!

শুধু চলতি মৌসুম নয়, এমবাপ্পের গোলোৎসব চলছে কয়েক বছর ধরেই। ২০২২-২৩ মৌসুমে পিএসজির জার্সিতে ৪৩ ম্যাচে তার গোল ছিল ৪১টি ও অ্যাসিস্ট ১০টি। ২০২১-২২ মৌসুমে তার গোল + অ্যাসিস্টের মোটসংখ্যা ছিল ৫৫টি (৩৯+২৬)। ২০২০-২১ মৌসুমে ৪২ গোলের পাশাপাশি করেন ১১টি অ্যাসিস্ট। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩০ গোলের পাশাপাশি ১৮ অ্যাসিস্ট। আর ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৩৯ গোলের পাশাপাশি ১৭ অ্যাসিস্ট।

শুধু ক্লাব নয়, দেশের জার্সিতে আরও ভয়ংকর এমবাপ্পে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে শিরোপা জেতাতে পালন করেছেন বড় ভূমিকা। আসরের সেরা উদীয়মান তারকার খেতাব উঠেছিল ১৯ বছরের এমবাপ্পের হাতে। আর ২০২২ সালে কাতারে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছিই নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও মেসির আর্জেন্টিনার কাছে হার মানতে হয়েছিল তাদের। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন ‘গোল্ডেন বুট’। এমবাপ্পে দেশকে জিতিয়েছেন উয়েফা নেশনস লিগের শিরোপাও।

বর্তমান সময়ের তারকাদের চেয়ে এমবাপ্পেকে আরও বেশি আলাদা করেছে তার জাতীয় দলের এমন পারফর্মম্যান্স। দেশের হয়ে কিছুই জেতা হয়নি জুড বেলিংহামের, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও নিষ্প্রভ ব্রাজিলের জার্সিতে, ২৮ ম্যাচে করতে পেরেছেন মাত্র ৩টি গোল। ব্যর্থ হয়েছেন কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপে। আর আর্লিং হালান্ডের নরওয়ের অবস্থা তো আরও বেশি শোচনীয়। কোয়ালিফাই করতে পারেনি কাতার বিশ্বকাপে, এমনকি আসন্ন ইউরোতে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি নরওয়ে। দেশ ও ক্লাবের হয়ে দারুণ ফর্ম রয়েছে কেবল এমবাপ্পেরই। তাকে পেয়ে রিয়ালের শক্তিমত্তা আরও বাড়বে।

রিয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন দলের সংখ্যা হাতেগোনা- বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল। বর্তমানে সেই দলগুলোই রয়েছে ব্যাকফুটে। বার্সার কথাই ধরা যাক, মেসির বিদায়ের পর থেকেই দুরবস্থা চলছে ক্লাবটিতে। সদ্যসমাপ্ত মৌসুমটিতে লা লিগা কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগ- সব জায়গায় হয়েছে ব্যর্থ। আর্থিক সংকটের কারণে দলে ভেড়াতে পারছে না বড় কোনো তারকাকে। এর মধ্যে আবার মৌসুম শেষে কোচ জাভি হার্নান্দেজকে বরখাস্ত করেছে ক্লাবটি। চলমান এই অস্থিরতার মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো অবস্থায় নেই কাতালানরা।

বার্সার মতো নাজুক অবস্থা বায়ার্ন মিউনিখেরও। শিরোপাহীন একটি বছর কাটিয়েছে জার্মান জায়ান্টরা। মৌসুম শেষে বরখাস্ত করেছে কোচ টমাস তুখেলকে। নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ম্যানসিটির সাবেক তারকা ভিনসেন্ট কোম্পানিকে। কোচ হিসেবে ৩৮ বছর বয়সী কোম্পানির নেই কোনো অর্জন। তার অধীনে খেলে এবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে রেলিগেশনের শিকার হয়েছে ইংলিশ ক্লাব বার্নলি।
তার অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানানো বায়ার্নের জন্য অসম্ভবই মনে হচ্ছে।

ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলও পার করছে ট্রানজেকশন পিরিয়ড। দীর্ঘ ৯ বছর ক্লাবটির দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিচ্ছেন জার্গেন ক্লপ। নতুন মৌসুমে তাদের পরিকল্পনা কেমন হয়, তা এখনো অনিশ্চিত। রিয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দল হিসেবে সবার আগে অবশ্য আসবে ম্যানচেস্টার সিটির নাম। পেপ গার্দিওলার অধীনে কয়েকটি মৌসুমে দারুণ খেলেছে সিটি। ২২-২৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালকে হারিয়েছিল, পরে জিতেছিল শিরোপাও। তবে ২৩-২৪ মৌসুমে রিয়ালের কাছে ধরাশায়ী হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয় সিটি। তবুও রিয়ালকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দল ইউরোপে কেবল সিটিই রয়েছে।

ইউরোপসেরা টুর্নামেন্ট ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ’কে ‘বাপ-দাদার সম্পত্তিতে’ পরিণত করেছে রিয়াল। শিরোপায় সংখ্যায় তাদের ধারে-কাছেও নেই অন্য ক্লাবগুলো। ৭টি ট্রফি নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে রয়েছে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। বায়ার্ন ও লিভারপুলের রয়েছে ৬টি করে শিরোপা। বার্সেলোনা জিততে পেরেছে মাত্র ৫ বার। আর রিয়াল এরই মধ্যে জিতে ফেলেছে ১৫টি ইউসিএল শিরোপা, ভাবা যায়! এমবাপ্পে যোগ দেয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদ যে আরও ভয়ংকর দলে পরিণত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্লাবটির দুই কিংবদন্তি এরই মধ্যে ১৬তম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফির গন্ধ পাচ্ছেন। কিংবদন্তি গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস এমবাপ্পেকে স্বাগত জানিয়ে ‘এক্স’ এ লিখেছেন, ‘তোমাকে নিয়ে ষোলোর পথে যাত্রা শুরু হলো’। রিয়ালের ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি মার্সেলো বলেছেন, ‘১৬ আসতে চলেছে’।

অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারেরই শৈশবের স্বপ্ন ছিল রয়্যাল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা। এমবাপ্পেরও ছিল। রোনালদো-ভক্ত এমবাপ্পের বহু দিনের সেই লালিত স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে। অন্যদিকে, বড় বড় ট্যালেন্ট দেখে ক্লাবের ভেড়ানোও রিয়ালের অন্যতম লক্ষ্য থাকে। জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, ডেভিড ব্যাকহাম, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, রাউল গঞ্জালেস, করিম বেনজেমাদের দলে এনে ক্লাব ফুটবলে রাজত্ব করেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। এবার এমবাপ্পে, ভিনি, বেলিংহাম, রোদ্রিগো, চুয়েমিনি, কামাভিঙ্গাদের মতো প্রতিভাদের নিয়ে রিয়াল কেমন খেলে, তা জানার জন্য অন্তত একটা মৌসুম অপেক্ষা করতে হবে। তবে মহাপরাক্রমশালী রিয়ালে এমবাপ্পের যোগ দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই ফুটবলপ্রেমী ও বোদ্ধাদের মনে শুধু একটাই প্রশ্ন, ‘এই রিয়ালকে থামাবে কে?’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ