কারারক্ষীদের রুখবে কে?
কারারক্ষীরা যে কারাগারের অভ্যন্তরে ছোটখাটো অপরাধে জড়িত থাকেন, এটা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। বাংলাদেশের কারারক্ষীদের বিষয়ে আমাদের সবারই কম-বেশি ধারণা আছে। যুগের পর যুগ যায়, সরকারের পর সরকার আসে, কারারক্ষীদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথাও হয়; কিন্তু অবস্থার কোনো বদল হয় না। এ এমন এক দুষ্টচক্র, যা আমাদের মেনে নিতে হবে, গা-সয়ে নিতে হবে এটাই যেন নিয়তি; কিন্তু রক্ষীরাই যখন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হন, তখন সমাজ-রাষ্ট্র থেকে অপরাধ দূর করা কঠিন।
কারারক্ষীদের এমনই এক অপরাধ-প্রবণতার খবর সম্প্রতি জানা গেল সংবাদমাধ্যমে। গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, কারাগারে মাদক ও মোবাইল বাণিজ্যে জড়িত কারারক্ষীরা। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন কারাগারে টাকার বিনিময়ে বন্দিদের কাছে মাদকদ্রব্য, মোবাইল ফোন সরবরাহসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক বছরে ৪৪ কারারক্ষী শাস্তি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন পাঁচজন।
জানা গেছে, এভাবে টাকার লোভে কারাগারের ভেতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক কারারক্ষী। কোনোভাবেই মাদক বাণিজ্য থেকে নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি থাকা আসামিদের সঙ্গে কারারক্ষীদের যোগসাজশে চলছে মাদক ও মোবাইল বাণিজ্য। কারাগারে বন্দি বেড়ে গেলে সামর্থ্যবানরা টাকা দিয়ে আরাম-আয়েশে থাকার চেষ্টা করেন। তখন টাকা নিয়ে পুরোনো কয়েদিদের সহযোগিতায় সেই সুযোগ-সুবিধা দেন কিছু কারারক্ষী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে মাদকদ্রব্য (গাঁজা-ইয়াবা) সরবরাহ এবং মোবাইল ফোন বিক্রি।
অতিরিক্ত দামে কেনা ছোট আকৃতির ফোন নিজেদের কাছে কৌশলে লুকিয়ে রাখেন কয়েদিরা। এসব সরবরাহের টাকা কারারক্ষীরা পুরোনো কয়েদি ও ভাগবাটোয়ারা করেন। অপরাধীরা কারাগারে যায় শাস্তি ভোগ করতে, সেখানে যদি তাদের আরাম-আয়শেই রাখা হয়, তাহলে আর কারাগারে রাখার অর্থ কী? কারাগারে থেকেও যদি অপরাধীরা আরও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে বোঝা যায় সমাজে অপরাধের মাত্রা কতখানি গভীর? আর তা ঘটে কি না স্বয়ং কারারক্ষীদের সহযোগিতায়! তার মানে অপরাধের ওপর অপরাধ।
সূত্র জানিয়েছে, মাদকবাণিজ্য, মোবাইল ফোন সরবরাহ, বন্দিদের তথ্য আদান-প্রদান, বন্দির স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা, জামিন বাণিজ্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অপরাধে গত এক বছরে ১১ কারাগারের ২১ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে পাঁচজনকে। ১৮৭ কারারক্ষীকে সতর্ক করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ৩৯টি বিভাগীয় মামলা চলমান।
বিগত সরকারের আমলে থানা-পুলিশদের অনেক রকম অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলেও অনেক কারাগারে তা চলছে। আমরা এর সম্পূর্ণ নির্মূল চাই। কারারক্ষীরা যদি এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সমাজ কখনো অপরাধমুক্ত হবে না। শুধু চাকরিচ্যুত করলেই হবে না, আমরা চাই এসব অপরাধীর আরও দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে এ ধরনের অপরাধে জড়ানোর সাহস আর কোনো কারারক্ষী না পায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে