Views Bangladesh Logo

বইমেলায় একটি পোস্টার ঘিরে কেন এত বিতর্ক

মর একুশে বইমেলা ২০২৫ উপলক্ষে ‘৫২-এর চেতনা ২৪-এর প্রেরণা’ স্লোগান লেখা একটি পোস্টার ঘিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয় পোস্টারটি।

জানা যায়, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে উপস্থাপন করতে পোস্টারে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোলা একটি সমাবেশের ছবি। বইমেলার উদ্বোধনের পর এই পোস্টারের ছবির মূল ছবিটি দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন অনেকে।

যদিও সমালোচনার মুখে অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত একটি পোস্টার সরিয়ে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। তারা বলেছে, পোস্টারটি বাংলা একাডেমি তৈরি করেনি। অন্য একটি পক্ষের করা এই পোস্টার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

বিষয়টি নিয়ে একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রথম কথা এটা বাংলা একাডেমির পোস্টার না। তবে বইমেলার পোস্টার। একাডেমির মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এটি বানানো হয়নি। অন্য একটি পক্ষ তৈরি করেছে। আমাদের কোনোভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টারটি অপসারণ করা হয়েছে।’

যে কারণে পোস্টারটি নিয়ে বিতর্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র ছবিটি নিয়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পোস্টারটির মধ্যে ছবিতে যাদের দেখা যায়, তাদের একজন নিলু হক। মুক্তিযুদ্ধের অংশীজন। নিলু হক নিজেই অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ছবিতে লাঠি হাতে আমি ১৯৭১-এর ১৫ মার্চের ছবি, ধিক্কার জানাই ছবি ব্যবহারের জন্য। ১৯৫২ আমার জন্মই হয়নি। ১৯৫২তে স্বাধীনতার স্লোগান ছিল না। মাতৃভাষার স্লোগান ছিল।’

ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলে লিনু হক বলেন, ‘কিছু রাজাকার আলবদর, পাকিস্তানপন্থি ছাড়া সাড়ে ৭ কোটি মানুষ এ যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল। আমি খুব অল্প বয়সে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধ আমার, অস্তিত্বে। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি নিয়ে যখন, বিকৃত হতে দেখি, আমি কলম ধরি। বিকৃতর বিরুদ্ধে কলম ধরে তীব্র সমালোচনা শুনেছি; কিন্তু আমি আমার নীতি থেকে একচুল সরে আসিনি। আমি বিশ্বাস করি সত্যের শক্তি অপরিসীম। সত্য তার আপন আলোয় প্রকাশিত হয়। কারও না কারও হাত ধরে।’

নিলু হক বলেন, ‘আমি কোনো দলের নই, তবে নিরপেক্ষ নই, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। আমার সাহস প্রেরণা আমার মুক্তিযুদ্ধ। তাই মুক্তিযুদ্ধের আমার জানা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমি সব সরকারের আমলে কলম ধরতে পারি।’

একাত্তরের ছবিকে বায়ান্নর বলে চালিয়ে দেয়া অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা উল্লেখ করে গবেষক শাহাদাত পারভেজ জানান, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবিকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছবিতে মাঝখানের মেয়েটি লিনু হক। তিনি তখন অগ্রণী স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। লাঠিতে ঢেকে গেছে যার মুখ তিনি জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার। তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। একেবারে বাঁ পাশের মেয়েটি মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগম। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন।

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্ব ও সভাপতিত্বে যে নারী সমাবেশ হয়- এটি তার ছবি। ছবিটি পরদিন ১৬ মার্চ ‘পাক্ষিক চিত্রিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আরেকটা কথা- বায়ান্ন সালে আমাদের এই শহীদ মিনার ছিল না। ‘মা-বোনেরা অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ মুক্ত কর’ এ স্লোগানও ছিল না। আর একেবারে ডান দিকের ফেস্টুনে লেখা আছে- ‘শেখ মুজিবের পথ ধর, বাংলাদেশ মুক্ত কর।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ