Views Bangladesh Logo

সরকারি গাড়ি ব্যবহারে উপদেষ্টাদেরও অনিয়ম কেন?

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর গাড়িবিলাসের কথা আমরা জানি। নিজেদের দামি দামি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তারা যথেচ্ছভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন। কারও কারও নামে বরাদ্দ ছিল তিন-চারটি গাড়ি। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের লোকজন শুধু নয়, আত্মীয়স্বজনরা পর্যন্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন। সরকারি গাড়ি নিয়ে মন্ত্রীদের ‘বাহাদুরি’ সে সময় কুড়িয়েছিল তিরস্কার। আওয়ামী লীগ সরকার বেহিসাবে সরকারি সম্পদের লুটপাট করেছে, অপচয় করেছে- তাতে তাদের ওপর জনগণেরও ক্ষোভ ছিল প্রচণ্ড। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে।

গণঅভ্যুত্থান আমাদের মনে আশা জাগিয়েছিল পূর্বের সব অনিয়ম দূর হয়ে যাবে। সরকারের দায়িত্বে থাকা লোকজন আর আমাদের সম্পদ যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন না। কিন্তু গতকাল (৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর চমকে দিল আমাদের- সবকিছু আমূল বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এখন একই পথের পথিক। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে তারাও নিয়ম-নীতির ধার ধারছেন না। বিধি অনুযায়ী, উপদেষ্টাদের একটি করে সরকারি গাড়ি পাওয়ার কথা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো কোনো উপদেষ্টা নিজের ও দপ্তরের নামে তিন থেকে চারটি সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা পরিবারের সদস্যরা সেই গাড়িতে সওয়ার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস), সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), জনসংযোগ কর্মকর্তারাও (পিআরও) কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাড়ি হাঁকাচ্ছেন।

এ সংবাদ আমাদের শুধু হতবাকই করে না, প্রচণ্ড আশাহতও করে। এত রক্তের বিনিময়ে এই গণঅভ্যুত্থান, এতগুলো মৃত্যু, শিশু ও তরুণের জীবনের বিনিময়ে যে নতুন দেশ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে সেখানে কেন এই অনিয়ম! সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ২২ উপদেষ্টার মধ্যে আটজন ছাড়া বাকি সবাই একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। একমাত্র বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সরকারি কোনো গাড়িতেই চড়েন না। সরকারি কাজে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। দায়িত্ব নেয়ার পরই সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর (পরিবহন পুল) থেকে একটি করে টয়োটা হাইব্রিড ক্যামরি গাড়ি বরাদ্দ পান সব উপদেষ্টা। দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ টাকাও পাচ্ছেন তারা। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকজন উপদেষ্টার পরিবারের সদস্য ব্যবহার করছেন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রকল্পের দামি গাড়ি। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে জোগান দেয়া হয়েছে একাধিক চালকও। এসব বাড়তি গাড়ির পেছনে চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ গাড়িপ্রতি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতি মাসে গচ্চা যাচ্ছে প্রায় লাখ টাকা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জনগণের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মের চর্চা প্রতিষ্ঠা করবে- এটিই সবার প্রত্যাশা। উপদেষ্টারা যেভাবে গাড়ি ব্যবহার করছেন, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন আর আশা করার কিছু থাকে না। তারপরও আমরা আশা করব আমাদের মাননীয় উপদেষ্টাদের সুমতি হবে। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় তারা রোধ করবেন। যতটুকু প্রয়োজন অবশ্যই তারা ব্যবহার করবেন; কিন্তু ক্ষমতাবলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ