কেন বাড়ছে কমিকস বইয়ের চাহিদা
শিশু-কিশোর পাঠকের কাছে রহস্য, রোমাঞ্চ আর ভৌতিক গল্পকাহিনীর পাশাপাশি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলছে কমিকস বই। বলা যায়, অমর একুশে বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ কমিকস বই।
বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলার অন্যতম বেস্ট সেলার ঢাকা কমিকস প্রকাশনী থেকে অরিজিনাল সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ অবলম্বনে কমিকস ‘ক্রনিকলস অফ অ্যালেন স্বপন’, ‘সুপারহিরো ইব্রাহীম সিরিজ’ ইত্যাদি। পাঞ্জেরি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘বেসিক আলী সুপারহিরো ১-১৭’ সিরিজগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়াও ‘৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ’, ‘এ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দি আর্থ’ বইগুলো বিক্রির শীর্ষে।
বইমেলায় ‘ঢাকা কমিকস’ প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে দেখা যায় কমিকস বইগুলোর সামনে প্রচুর ভিড়। বিশেষ করে ‘ক্রনিকলস অফ অ্যালেন স্বপন’ বইটি ছোট-বড় অনেকে আগ্রহ ভরে দেখছেন। এ ছাড়াও পাঞ্জেরির স্টলে গিয়েও কমিকস বইয়ের টেবিলে প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে।
‘ক্রনিকলস অফ অ্যালেন স্বপন’ বইটি প্রচুর সাড়া মিলছে জানিয়ে ঢাকা কমিকস স্টলকর্মীরা জানান, ‘আমরা বিশ্বাস করি এটা একটা দারুণ যুগের সূচনা। খুব শিগগিরই কমিকস আমাদের কালচারে আরকটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবে।
‘ক্রনিকলস অফ অ্যালেন স্বপন’-এ রয়েছে ৫টি সাইকো-হরর গল্প নিয়ে কমিকস। ডোম, স্কন্ধকাটা, ফাঁদ, মানসাঙ্ক ও পেঁয়াজু। এঁকেছেন মেহেদী হক, কাজী মারুফ, জাবির মাহমুদ রাতিন ও আব্দুল্লাহ আল যুনায়েদ। কমিকসটি পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলায় ঢাকা কমিকসের স্টলে (৯৪৯-৯৫০)।
প্রকাশকরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়রাও কমিকস খুঁজছেন।
‘ঢাকা কমিকস’-এর কমিক বইয়ের চিত্রশিল্পী শাফায়েত সাগর ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশে এমনিতে কমিকসের চাহিদা বেশ ভালো। ছোট-বড় সব গ্রেডের কমিকস বই পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে চাহিদাও ভালো। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে ছোটগল্প বা অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি কমিকস বইয়ের চাহিদা বেড়েই চলছে।
মা-বাবার সঙ্গে বইমেলায় কমিকস বই দেখছিলেন ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরন্য। অরন্য কিনেছেন ‘পিশাচ কাহিনী’। অরন্য বলেন, মোবাইল না দেখে কমিকস বই দেখতে, পড়তেই ভালো লাগে।
পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্সের স্টলকর্মী ফাহিম জানান, বরাবরই কমিকস বইগুলো বেশি বিক্রি হয়। বিশেষ করে ‘বেসিক আলী সুপারহিরো’ ১-১৭ পর্যন্ত সিরিজ ভালো চলছে। অনেকে পুরো সেট নিচ্ছে। ক্লাসিক কমিকসের মধ্যে ‘দ্য লাস্ট অব দ্য মোহকান্স’ খুব ভালো চলছে। এ ছাড়াও বাবু সিরিজও ভালো চলছে।
ফাহিম জানান, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা এসব পছন্দ করছে। আগে দেখা গেছে গল্প হলে পড়ছে। এখন গল্পের পাশাপাশি চিত্রও চাচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের শিক্ষণীয় বইগুলোও ভালোভাবে চলছে।
এ ছাড়াও বিশ্বসাহিত্যের কিছু সেরা সেরা বই যেগুলো অন্য প্রকাশনীতে অনেক বেশি দাম, আমরা সেগুলো শুধু কম দামে দেয়ার চেষ্টা করছি। ‘৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ’, ‘এ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দি আর্থ’ এগুলোর বেশ সাড়া রয়েছে।
ঢাকা কমিকস ২০১৩ থেকে বাংলা ভাষায় মৌলিক কমিকস নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে ঢাকা কমিকসের প্রকাশক ও কমিকস লেখক মেহেদী হাসান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, কমিকসের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ আগেও মূলত ছিল, ওভাবে সচরাচর ছিল না।
তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে মেহেদী হাসান আরও বলেন, পৃথিবী এখন ভিউজ্যুয়াল। লেখা-পড়ার চাইতে আগে একটি ছবি দেখতে পছন্দ করে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম জটিল কিছু পড়ার পাশাপাশি যেটাতে একটা ছবি আছে, ছবি দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, এটার প্রতি তাদের একটা ক্রেজ আছে।
অপরদিকে, পপ কালচারে কমিকস আগে থেকে জনপ্রিয়। ‘ডিসি বনাম মার্ভেল’, জাপানের ‘মাঙ্গা’ এগুলো একটা প্রজন্মের কাছে পরিচিত। পাশাপাশি তারা বাংলায় যখন পাচ্ছে আরও সাদরে গ্রহণ করছে।
শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী পাঠকের কমিকস বইয়ের প্রতি আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে মেহেদী হক আরও বলেন, ঢাকা কমিকসের বিশেষত্ব এখানেই, এখানে বৈচিত্র্য আছে। শিশু থেকে শুরু করে বড়দের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই আছে। যেমন ছোটদের শিক্ষামূলক, বিজ্ঞানের কমিকস আছে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, রূপকথা, সুপার হিরো, হরোর নিয়ে কমিকস আছে। শুধু একধরনের করলে এতটা সাড়া পড়তো না। বিভিন্ন রুচির পাঠকরা এখানে আসেন।
কমিকস বইয়ের ব্যাপক চাহিদার কথা উল্লেখ করে মেহেদী হক বলেন, ‘সামনে পাঠক আরও বাড়বে এ কারণে যে, আমরা লক্ষ করছি গ্রাফিক নভেল যেটা বড় কমিকস অন্তত দুই-তিনশো পৃষ্ঠার একটা ভালো ক্রেজ দেখা যাচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে অন্তত চারটা বড় কমিকস এই মুহূর্তে করছি। আমরা আশাবাদী এটা আরও অনেক বেশি ছড়াবে। অনেকে করতে এগিয়ে আসবে।’
লেখকরাও এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনুপ্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন।
কমিকস ‘সুপারহিরো ইব্রাহীম সিরিজ’-এর লেখক তানজীম উল ইসলাম ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, এখন আমরা বইমেলায় যেমন অনেক কমিকস দেখতে পাই, সেটা আসলে আগে এরকম ছিল না। বেশিরভাগ প্রকাশনী কমিকস বই প্রকাশ করতেও চাইতেন না বইমেলায় রাখতেও চাইতেন না। সেই জায়গা থেকে অনেকেই কমিকস বই বের করছেন, স্টলে রাখছেন। এটার পরিবর্তন ধীরে ধীরে এসেছে।
তানজীম উল ইসলাম বলেন, প্রথমে যখন ঢাকা কমিকসের যাত্রা শুরু হয় তখনো এতটা জনপ্রিয় ছিল না। ধারণা ছিল কমিকস হয়তো বাচ্চাদের বই কেউ পড়বে না। এখানে মার্কেট তৈরি করার একটা ব্যাপার আছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা কমিকসে আমরা যখন বই করতে শুরু করেছি তখন মানুষ পড়ে বুজেছে যে, কমিকসের চাহিদা বাজারে রয়েছে। এ জন্য এখন প্রতিথযশা প্রকাশনীগুলোও কিন্তু কমিকসের বই বের করছে। এখন অনেকে কমিকস নিয়ে কাজ করছে। আস্তে আস্তে মার্কেটটা বেশ বড় হয়েছে।
কমিকসের চাহিদা দিন দিন বাড়ায় লেখক হিসেবে নিজের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক উল্লেখ করে তানজীম উল ইসলাম আরও বলেন, পাঞ্জেরি, ঢাকা কমিকসসহ বিভিন্ন প্রকাশনীতে এর বড় স্টল রয়েছে। ব্যাপারটা বইমেলা প্রাণবন্ত আকার ধারণ করছে। লেখক হিসেবে আমার জন্য খুবই তৃপ্তিদায়ক। আমি এতদিন ধরে ইব্রাহীম সিরিজের কাজ করতে পেরেছি। ইব্রাহীমের যে ১০টি পর্ব শেষ হলো সেটি নিয়ে আমার মধ্যে তৃপ্তি রয়েছে। আশা করছি কমিকসের চাহিদা আরও বাড়বে। দিন দিন কমিকস আরও প্রসারিত হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে