প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ঢাকার দুই মেয়র ব্যর্থ কেন?
ঢাকার কথা বললে নগরবাসীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকায় থাকতেও বাধ্য অনেকে আবার এখানে বসবাস করাও নানা কারণে কঠিন। একে তো ঢাকা অত্যন্ত ব্যয়বহুল শহর। দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত দিক দিয়েও ঢাকা বসবাসযোগ্যহীন হয়ে উঠছে দিন দিন। ঢাকার বাতাস দূষিত, পানি দূষিত এবং যানটের কারণে রাজধানীবাসী নাকাল। শব্দদূষণেও ঢাকা বিশ্বের শীর্ষে। এর মাঝে আছে মশার উৎপাত। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা চরম ভোগান্তির।
ঢাকার জীবনযাপনের সমস্যার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাও মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে না। কারণ ভালো স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল এবং দেশের প্রধান প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবই ঢাকানির্ভর। তাই ঢাকার দুই মেয়রের কাছে ঢাকাবাসীর প্রত্যাশাও থাকে বেশি; কিন্তু দুই মেয়র ঢাকাবাসীর স্বপ্ন ও আশায় বারবারই পানি ঢেলে দিয়েছেন। তাদের কাজই যেন কেবল প্রতিশ্রুতি দেয়া। তবে বাস্তবায়নের বেলায় তারা ব্যর্থ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেল, নির্বাচনি নির্বাচনী ইশতেহারে ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের বাস্তবায়ন খুব কম। ‘ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদের চার বছর: নাগরিকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক অনলাইন সভার আয়োজন করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
নগর গবেষকদের মতে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং এই দুই সিটির কাউন্সিলরদের চার বছর পার হতে চলেছে। অথচ দুই সিটিতে মেয়রদের ৮৮টি প্রতিশ্রুতির এক-তৃতীয়াংশও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ভোটের রাজনীতির কারণে এমন সব প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন, যেগুলোতে এখতিয়ারই নেই মেয়রদের। আবার পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণেও অনেক উদ্যোগে আসেনি সফলতা।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, নির্বাচনি ইশতেহারে উত্তরের মেয়র একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত ও আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অপরদিকে দক্ষিণের মেয়র নির্বাচনি ইশতেহারে ঐতিহ্যবাহী, সুন্দর, প্রাণবন্ত, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে প্রায় ৫০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উভয় মেয়রই ঢাকার ভয়ানক যানজটের উন্নতি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও মশার উপদ্রব নির্মূলসহ সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সরকারি হিসেবেই গত বছর রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৮০ জন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন। চলতি বছর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৮৮ জন। কয়েকটা পার্ক উদ্ধার করতে পারলেও খালগুলো উদ্ধার হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কিছুটা উন্নতি হলেও বর্জ্যবাহী গাড়িচাপায় প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক।
ঢাকার শ্রীবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও শিশুদের খেলার মাঠ নেই। যানজট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর কারণ অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। আর শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ঠেকানোর জন্য যে দুই মেয়র কিছু করছেন এমন নজির দেখা যায়নি। যে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যায়। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে মেয়রদের উদ্যোগ নেই।
নগর গবেষকরা বলছেন, নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মেয়ররা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা চার বছরে বাস্তবায়ন কঠিন। মূলত মানুষকে শোনানোর জন্য তারা এটি করেন। সাধারণ মানুষ কী চান, মেয়ররা ভালো করেই জানেন। তারপর তারা প্রতিশ্রুতি ভুলে যান।
অবশ্য এ-কথাও সত্য, বিপুল জনসংখ্যার চাপে ঢাকা বিপর্যস্ত। এ থেকে আশু মুক্তি অসম্ভব। তারপরও নগরপ্রধান হিসেবে দুই মেয়রের কাছে নগরবাসী দাবি-দাওয়া অনেক।
নগরবাসী চায় একটু স্বস্তির জীবন। একটু নিরাপদ, নিশ্চিন্ত জীবন; কিন্তু অর্থ-সংকট, দক্ষ জনবলের অভাব আর কিছুটা গাফিলতির কারণেও দুই নগর প্রধান ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা আশা করব, মেয়াদের শেষ বছরে দুই মেয়র তাদের প্রতিশ্রুতির আরও কিছু বাস্তবায়ন করে নগরবাসীকে স্বস্তি দিবেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে