বৃষ্টি হলেই কেন শহর ডোবে
আগে পত্রিকায় শিরোনাম আসত- এক দিনের বৃষ্টিতে ডুবল চট্টগ্রাম নগরী, এক রাতের বৃষ্টিতেই ভেসে গেল সিলেট শহর, এক দিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহর পানিতে নিমজ্জিত; এখন আর এক দিন সারাদিন বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না, শহরগুলো তলিয়ে যাওয়ার জন্য একঘণ্টার বৃষ্টিই যথেষ্ট। এ বছর বর্ষা এখনো জোরেশোরে শুরুই হয়নি। তারপরও মাঝে মধ্যে যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতেই তিনটি প্রধান শহর তলিয়ে যাওয়ার খবর এসেছে।
গতকাল সোমবার (১০ জুন) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সাত দিনের মাথায় বৃষ্টিতে আবার ডুবল সিলেট শহর। এর আগে ২৯ মের বৃষ্টিতে সিলেটের ১০টি উপজেলা ও নগরে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এবার গত শনিবার (৮ জুন) রাতের বৃষ্টিতে আবার নগরের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এবার অবশ্য তিনঘণ্টা ধরে বৃষ্টি হয়েছে, রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত, প্রায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর ছিল পাহাড়ি ঢল। তাতেও একটি শহর এত দ্রুত তলিয়ে যাওয়া দুঃখজনক।
সিলেট না হয় তলিয়ে গেল পাহাড়ি ঢলে, একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর ডুবে কেন? শহর-নগর সাধারণত একটু বেশি সুরক্ষিত অঞ্চলেই গড়ে ওঠে। নদীর বাঁধ না ভাঙলে বা পানি উপচে পড়লে শহরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা না; কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের প্রধান তিনটি শহর মূলত ডুবে যাচ্ছে জলাবদ্ধতার কারণে। জলাবদ্ধতার কারণ পানি নিষ্কাশনে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব। বিশ-ত্রিশ বছর আগেও এই তিনটি নগরীতেই প্রচুর পরিমাণ খাল, নালা ছিল। সাত দিন বৃষ্টি হলেও বন্যার আলামত দেখা যায়নি। পানি দ্রুত পাশের নদীগুলোতে সরে পড়ত; কিন্তু এখন?
এর মধ্যে এই তিনটি নগরীতেই জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে বহুগুণ। তাদের আবাসনের সুব্যবস্থা না করে বরং পদে পদে নানা প্রতিবদ্ধকতাই সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক খাল সম্পূর্ণ ভরে ফেলা হয়েছে। অনেক খাল ময়লা-আবর্জনা পড়ে আংশিক পূর্ণ। ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। নগরী তিনটির প্রধান সড়কের পাশের ড্রেনগুলোও অনেক সময় আবর্জনায় পূর্ণ দেখা যায়। এর জন্য শুধু নাগরিকরা দায়ী, তা নয়। নগর-পরিকল্পনাবিদরাও দায়ী। তারা কেন ড্রেনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে পারেননি? প্রয়োজনে আইন করে হলেও শহর পরিষ্কার রাখতে হবে।
ঢাকার মেট্রোরেলে কখনো একটা বাড়তি কাগজও পড়ে থাকতে দেখা যায় না, তাহলে বাস-স্টেশনগুলোতে কেন এত ময়লা পড়ে থাকে! তার ব্যবস্থা কেন নগর কর্তৃপক্ষ করতে পারেন না? অর্থের অভাব না কি সদিচ্ছার অভাব? বাস-স্টেশনগুলো থেকে প্রতিদিন কী পরিমাণ চাঁদা আদায় হয় এবং তা কার কার পকেটে যায়, তা নিশ্চয়ই নগর কর্তৃপক্ষের অজানা নয়।
আসলে সদিচ্ছার অভাবেই আমাদের ভালো কিছু হচ্ছে না। সবার মনেই একটা ধারণা জন্মে গেছে, চলছে তো চলুক না। দু-চার দিন ভোগান্তি হলে আর কী হবে! জনগণও এসব নিয়ে তেমন কিছু বলে না, সরকারও মাথা ঘামায় না। তা নাহলে এই তিনটি প্রধান শহরে বছরের পর পর জলাবদ্ধতা মানুষ কীভাবে সহ্য করে! তারা কি এটা নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে?
আমাদের জোর দাবি থাকবে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের প্রতিটি নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হোক। শহরের আশপাশের খাল, নালাগুলো উদ্ধার করা হোক। যেন বৃষ্টি হলে পানি দ্রুত নদীতে সরে পড়তে পারে। একটু পানিতেই যেন শহর তিনটিতে এমন অনাসৃষ্টি না হয়, তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে