Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কেন হঠাৎ সবকিছু মনে পড়ে

Mamun–Or–Rashid

মামুন–অর–রশিদ

শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

শেষমেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই অটোরিকশা চালকরা রাস্তা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে কোনো ব্যক্তিকে কর্মহীন করা যাবে না। এতে এ ঘটনার আপাতত সমাধান হয়েছে। অটোরিকশাচালকরা দুদিন ধরে ঢাকার রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন। হঠাৎ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞায় ফুঁসে উঠেছেন তারা। মিরপুর থেকে রামপুরা চালকদের বিক্ষোভে থমকে গেছে কোনো কোনো সড়ক।

ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার বা তিন চাকার বাহন নিরাপদ নয় এ কথা সবার জানা। এর গতি আর ব্রেকিং সিস্টেম দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন অনিরাপদ যান যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এই আলোচনা বারবার উঠলেও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে এই যানগুলো নাকি ইভি বা ইলেকট্রিক ভ্যাকেল। আমরা দামের কারণে টেসলার গাড়ি ব্যবহার করতে পারি না তো কী হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যুৎগতিতে চলা রিকশাতো আছে, তাই না?

চলুন অন্য আরেকটি আলোচনায় যাই, ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বাজারে হরদম বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে নিরাপদ খাদ্য আদালতে মামলা ঠুকে দিলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। মামলা করার বিষয়টি যথার্থ বলেই সবাই মনে করছে। একটি বহুল প্রচলিত পানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার কোনো অনুমোদন নেই। এটি কেবল বাংলাদেশে সম্ভব! প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ কেন এসব মনে পড়ে যায়। কেন হঠাৎ মনে হয় রিকশা বন্ধ করতে হবে?

কেন মনে হয় বাজার থেকে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় তুলে নিতে হবে? এসব হঠাৎ কেন মনে হয়? বাজারজাত করার সঙ্গে সঙ্গে কেন বিষয়গুলো কারও মনে পড়ে না? আসলে কেউ দেখার নেই। সারা দেশে এই অটোরিকশা বা বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার বাহনের সংখ্যা কত? এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। কারণ এই যান্ত্রিক যান নিবন্ধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যেগুলো পৌরসভার মধ্যে চলাচল করে সেগুলোকে পৌরসভা একটা লাইসেন্স দিচ্ছে। তাও সব জায়গায় না। কারণ পৌরসভা যান্ত্রিকযানের লাইসেন্সিং অথোরিটিই নয়। তারা যে লাইসেন্স বা চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে, সেটি কোন আইনে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলো এই লাইসেন্স দেয় না; কিন্তু গ্রামে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করার একমাত্র বাহন এই ব্যাটারিচালিত ভ্যান বা রিকশা।

ঢাকার কথা যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে অলি-গলিতে এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাজার নয়, লাখ লাখ অটোরিকশা চলাচল করছে। খুব সহজ একটা হিসাবের কথা বলি। তাহলে কী পরিমাণ অটোরিকশা রয়েছে, তা ধারণা করা যায়। আগে সাধারণত রাত ১১ টার পর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে শুরু করত। আবার সকাল ৭টা থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করত; কিন্তু এখন দিনের তুলনায় রাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এই নয় ঘণ্টা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ করা হয়। বিদ্যুতের দামের যে শ্রেণি-বিভাগ রয়েছে সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেয়ার জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করে দেয়াও হয়েছে। তবে গ্রামে গ্রামে যে চার্জ দেয়া হয়, তা গৃহস্থালির বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। সেদিক থেকে হিসাব করলে সরকার প্রতারিত হচ্ছে; কিন্তু সে আলোচনা তুলে রেখে যদি বিদ্যুৎ ব্যবহারের আলাদা শ্রেণি-বিন্যাসের দিকে তাকাই, তাহলেও দেখা যায়, অটোরিকশাগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এই ব্যাটারিচালিত অটো-রিকশাগুলোকে তিনি ইভি বা ইলেক্ট্রিক ভ্যাকেল হিসেবে দেখেন। ইভিগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী। ফলে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই এগুলো বন্ধ করার। খুব ভালো কথা। তাহলে এখন সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) কেন এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে? বিআরটিএ কি সরকারের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান?

বিআরটিএ-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যাটারি অথবা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির তিন চাকার বাহন ঢাকা মহানগরে চলাচলের কারণে সড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী ব্যাটারি অথবা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির তিন চাকার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রঙচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়-ঝক্কড় মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

সত্যিই কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ! গত ১৫ বছর ধরে এই যে লাখ লাখ অটোরিকশা রাস্তায় চলাচল করল, তখন এই বিআরটিএ কোথায় ছিল? তখন কেন তারা এগুলো দেখেনি? এখন একটি অটোরিকশা মানে একজন চালক শুধু নয়, একটি পরিবার। সেই পরিবারের সদস্যসংখ্যা যদি ৫ জন করে হয়, আর সারা দেশে ২০ লাখ অটো-রিকশা থাকে, তাহলে সংখ্যাটা এক কোটি। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১৬ ভাগের ১ ভাগ এই অটোরিকশার ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল।

শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ৬ দশমিক ২৫ ভাগ। এখন চাইলেন সবাই সব কিছু বন্ধ করে দিল, তা হয় না। না কি হওয়াটা সম্ভব? তাহলে এই ছয়-সাড়ে ছয় ভাগ মানুষ কী করে খাবে? আচ্ছা, ধরে নিলাম জোর জবরদস্তি করে এই অটোরিকশা বন্ধ করে দেয়া হলো, তাহলে এই অটোরিকশার জন্য যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, তার কী হবে?

বিআরটিএ বা সরকারের অন্য কোনো সংস্থার যদি মনেই হতো এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হবে, তাহলে শুরুতেই কেন বন্ধ করা হয়নি? সরকারের এক প্রতিষ্ঠান বলছে এগুলো ভালো না, তাই বন্ধ করে দেয়া উচিত। অন্য প্রতিষ্ঠান বলছে, না এগুলো ভালো। অসাধারণ। তাহলে মানুষ আসলে যাবে কোথায়? কার কথা বিশ্বাস করবেন?

আসা যাক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়র বিষয়ে। ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় শরীরের জন্য ভালো না খারাপ, সে বিবেচনা পরে; কিন্তু বাজারে যেভাবে এগুলো বিক্রি হচ্ছিল, তা বিধিসম্মত নয়। ঔষধ প্রশাসন কিংবা বিএসটিআই কারোর-ই অনুমতি না নিয়ে বাজারে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বিক্রি হচ্ছিল। এসএমসি প্লাস ২০২১ সাল থেকে বাজারে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় এনেছে। এরপর আকিজ, ব্রুভানা, দেশবন্ধু গ্রুপ ও প্রাণ বিভিন্ন নামে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বিক্রি করছে। এমন কি একজন ইউটিউবার এই পানীয় নিজস্ব ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করছে।

সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর মামলা করাতে আদালত এসব কোম্পানির মালিকদের আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ২০২১ সালের পর এখন ২০২৪, এই তিন বছর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কি নজরে বিষয়টি আসেনি? না কি হঠাৎ সব কিছু মনে পড়ে যায়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ