Views Bangladesh Logo

কুমিল্লায় যুবদল নেতা হত্যা

নতুন বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা কেন?

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে উঠছে। এমনকি গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা, মহান বিপ্লব হিসেবেও আখ্যা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নতুন এই বাংলাদেশে পুরোনো কোনো অনাচার-অত্যাচার থাকবে না; দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থাকবে স্বাভাবিক- দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থাকবে না, মানুষ ন্যায়বিচার পাবে; কিন্তু নতুন এই বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে পুরোনো বাংলাদেশের সেই ভয়াবহ চিত্র।

কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকরা ‘নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করেছে’ বলে অভিযোগ তুলেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ সংবাদমাধ্যম বলেছেন, ‘আমার ভাইকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা যখন আমাদের বাড়িতে তল্লাশি করে, তখন বারবার বলছিল, অস্ত্র কোথায়। আমরা কোথা থেকে তাদের অস্ত্র দিতাম? ভিত্তিহীন একটি তথ্যে আমার ভাইকে নির্যাতন করে মেরে ফেলল তারা। আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।’

গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তৌহিদুল ইসলামের লাশবাহী গাড়ি রেখে মানববন্ধন করেছে তার পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী। চার মেয়েকে নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন তৌহিদুলের স্ত্রীও। তারা লাশবাহী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন দৃশ্য তো এই নতুন বাংলাদেশে কাম্য ছিল না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক।’

বিগত সরকারের আমলে আমরা এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছি। সেসব নিয়ে অভিযোগ-প্রতিবাদ জারি ছিল, যদিও সঠিক বিচার পাওয়া গেছে কমই; যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ধীরে ধীরে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তাহলে কি সেই ফ্যাসিবাদই এখনো বহাল আছে? বিচারবহির্ভূত এমন হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জনমনে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

তৌহিদুল ইসলামের কি অপরাধ তাও জানেন না তার পরিবারের সদস্যরা। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দেখিয়েই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও ছিল না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি এসেছিলেন। কুলখানির আগের রাতে তাকে সাদা পোশাকধারীরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার পরদিন পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন।

ঘটনার বর্ণনা শুনে মনে হতে পারে তৌহিদুল ইসলাম বোধহয় ভয়ংকর কোনো অপরাধী। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী। যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাও তো তার এমন মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে কেন তুলে নিতে হলো? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কেন তার মৃত্যু হলো? এর দায়ভার কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর অবশ্যই সঠিক তদন্ত সাপক্ষে বিচার হতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ