Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন নারীর প্রতি সহিংসতা?

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

রে-বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়- শেষ পর্যন্ত কি এ কথাই সত্য হতে চলেছে বাংলাদেশে? গৃহ নির্যাতন থেকে শুরু করে যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতার আচরণ সব সময়ই পত্রিকার খবর হয়। এবার অভিযোগ উঠেছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই বছরে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনা পাওয়া গেছে। এমন খবর আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হেয়প্রতিপন্ন করে!

বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। দেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কেবল যে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চান, তা নয়। তারা দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাতে পারলে যে কোনো বাবা-মা-ই গর্ব বোধ করেন; কিন্তু, এ কী অবস্থা আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর? এ অবস্থা চলতে থাকলে গর্ব বোধ করার বদলে বাবা-মা আতঙ্কিত বোধ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে আগে অনেক কথাবার্তা হলেও এবার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর থেকে। ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পরও তা গোপন রাখে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর কার্যালয়। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার তো এটাই, ঘটনাটি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? যার কারণে অবন্তিকাকে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে হয়। অবন্তিকার আত্মহননের পর আরও অনেক ছাত্রী অভিযোগ করেন, অভিযোগ করলেও প্রশাসন আমলে নেয় না। ফলে তারা অভিযোগ করা থেকেই বিরত থাকেন।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অভিযোগ কমিটি গঠন করা হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির কার্যকারিতা কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি কী কাজ করে, সে বিষয়ে বারবার তথ্য চেয়েও পায় না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তার মানে অভিযোগ কমিটি আছে নামমাত্র, এবং তারা ছাত্রীদের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। খবরে প্রকাশ, যত ঘটনা ঘটে তার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী অভিযোগই দায়ের করেন না। অর্থাৎ, বহু ঘটনা থেকে যায় অগোচরে। অবন্তিকার মর্মান্তিক আত্মহননের পর এক ছাত্রী নিজের দমবন্ধ অনুভূতির কথা জানিয়েছেন কান্না গিলে গিলে। এমন কত ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কান্না গিলে বেঁচে আছেন তা কি আমরা জানি?

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসাসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৪ লাখ ১৬ হাজার। এর মধ্যে ছাত্রী ৪৮ শতাংশ। সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান হওয়াটা খুবই ইতিবাচক। দেশে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে নারীরা দেশের উন্নায়নে ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন; কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি নারীর জন্য নিরাপদ না হয় তাহলে নারীর জন্য নিরাপদ স্থান আর কোথায় হবে?

অপরাধীরা যদি শাস্তি না পায় তাহলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। শিক্ষাঙ্গন সুন্দর পবিত্র একটি স্থান। কেবল যৌন হয়রানি নয়, কেবল নারীর প্রতি সহিংসতা নয়, কোনোরকম অসদাচরণেই যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে না হয়- সেটাই প্রত্যাশা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ