Views Bangladesh Logo

সচিবালয়ে আগুন কেন?

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন লাগতে পারে এটা অনেকের জন্যই ছিল কল্পনার অতীত। এত সুরক্ষিত স্থানে, যেখানে মশা-মাছিও ঢুকতে পাস লাগে সেখানে মধ্যরাতে হঠাৎ কেন এমন ভয়াবহ আগুন! বিষয়টা শুধু আর বিস্ময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এতে জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে প্রবল আতঙ্ক। বিশেষ করে এই আগুন এমন সময়ই লাগল যখন সচিবদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। একাধিক রাজনীতিবিদ একে পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড বলছেন। কেউ কেউ একে বিদেশি চক্রান্ত বলেও সাব্যস্ত করেছেন। ঘটনা যারাই ঘটাক, যে ঘটনা ঘটেছে তা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সংবাদমাধ্যমের প্রাপ্ত তথ্যমতে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে, ওই ভবনটি ১০ তলা। ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগেছে ৬ ঘণ্টা। প্রশ্ন, সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবনের আগুন নেভাবে ৬ ঘণ্টা লাগল কেন? এটা ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা না? ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের এক কর্মী নিহতও হয়েছেন।

সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কারণ যদি জানা যায় ভালো, না জানা গেলে এই রহস্য যেমন আরও ঘনীভূত হবে, এরকম আগুন আরও গুরুত্বপূর্ণ ভবনে লাগার আতঙ্কও থাকবে জনমনে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না। ’

এই আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ শুধু যে অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যাবে তা না। জাতির আস্থা-বিশ্বাস-মূল্যবোধের জায়গাতেও এটা বিরাট ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় আতঙ্ক- এ আগুন এখান থেকে সবখানে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। যদি প্রকৃত অপরাধী ধরা না পড়ে তাহলে নানারকম সন্দেহ ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হতে থাকবে একে অপরের বিরুদ্ধে। আমরা চাই না এই আগুন সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা চাই দেশের আগুন নিভুক। জনমনে যেন কোনো আতঙ্ক নেমে না আসে। এই আগুনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারকে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। শুধু দোষ চাপিয়ে দিলে হবে না, দোষীকে খুঁজে বের করে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানার আগ পর্যন্ত জনমন শান্ত হবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ