পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণ কেন বাজারের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ
বাংলাদেশ সরকার প্রায়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা খুব বেশি কার্যকর করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আরও সাশ্রয়ী করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাম বেঁধে দেয়ার বিষয়টি আপাত অর্থে সহজই মনে হয়; কিন্তু এ দিয়ে দেশের পণ্য বাজারের জটিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত যে চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান, তা বোঝা যাবে না। এর ভেতরের কারণগুলো বোঝার জন্য সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ শৃঙ্খলা) থেকে নিয়ন্ত্রক সমস্যাগুলোর দুর্বলতাও বুঝতে হবে। খুচরা পণ্যের মূল্য নির্ধারণই কেন টেকসই সমাধান নয়, তা বোঝার জন্যই এ আলোচনা।
সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতা
যে কোনো কার্যকরী বাজারের মূলে থাকে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে স্বাভাবিক ভারসাম্য। যখন এই ভারসাম্যের নিচে সরকার স্থির মূল্য আরোপ করে, তখনই বাজার অস্থিশীল হয়ে ওঠে। বাজারে পণ্য সংকট দেখা দেয়। সাধারণ বাজারে দাম ওঠানামা করে পণ্যের সহজলভ্যতা ও ভোক্তার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। সরকার যখন কৃত্রিমভাবে কোনো পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়, উৎপাদনকারীরা তখন সেই পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দেয়, কারণ তারা মনে করে, তা না হলে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সময় যত যেতে থাকে, বাজারে সেই পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা কমিয়ে দিয়ে তারা সরকারি নীতির সরাসরি প্রতিহত করে এভাবে।
যেমন ধরা যাক মুরগি আর ডিমের কথা। এ দুটি পণ্যেরই দাম ওঠানামা করে বেশি, আর সরকারও কদিন পর পর এ দুটি পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়। আর এ দুটি পণ্যের দাম নির্ভর করে আরও কিছু বিষয়ের ওপর। যেমন খাবার, শ্রমসহ আরও কিছু বিষয়ের ওপর। এগুলোর খরচ আবার নির্ধারিত হয় স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারের ওপর। এখন সরকার যদি এগুলোর খুচরা মূল্য খুব কমিয়ে দেয়, তাহলে কী হবে? উৎপাদনকারীরা উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। কারণ তারা খরচ কুলাতে পারবে না। ফলে বাজারে ওসব পণ্যের সংকট দেখা দেবে স্বাভাবিকভাবেই।
উৎপাদন ও পরিবহন খরচে অবহেলা
বাজারে পণ্য আনতে যে পরিবহন খরচ হয় খুচরা মূল্য নির্ধারণের সময় প্রায়ই তাকে উপেক্ষা করা হয়। উৎপাদনকারীরা বহুরকম খরচের মধ্য দিয়ে যায়- কাঁচামাল সংগ্রহ, শ্রমিক খরচ, বিদ্যুৎ খরচ, পরিবহন খরচ ইত্যাদি। এর মধ্যে পচনশীল দ্রব্যগুলো যেমন ফল, শাকসবজি বা দুগ্ধজাত পণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার দরকার হয়। এগুলো দ্রুতও বিতরণ করতে হয়। তা না হলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব পণ্য সরবরাহে একটু দেরি হলে উৎপাদনকারীর খরচ আরও বেড়ে যায়। খরচ বাড়া মানেই তার লোকসান গোনা। এখন এই পণ্যগুলোর মূল্য যখন কেবল উৎপাদন খরচের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়, বাড়তি খরচগুলো মাথায় রাখা হয় না তখন উৎপাদনকারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। পণ্যের মজুদ কমিয়ে দেন। পণ্য বিতরণ-বণ্টন-সংস্থানের পেছনে যে বিনিয়োগ করতে হয় তাতে সাহস পান না।
তা ছাড়া, বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়া, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিও স্থানীয় বাজারে প্রভাব ফেলে। সরকার যখন খুচরা পণ্যমূল্য নির্ধারণ করতে যায়, তখন স্থানীয় বাজার বৈশ্বিক বাজার থেকে ছিটকে পড়ে, আর এটা উৎপাদন খরচ ও খুচরা মূল্যের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে। একদিকে খরচ বাড়ার চাপ, অন্য দিকে বাজারেও যদি সেই পণ্য বিক্রি করতে হয় লস দিয়ে, উৎপাদনকারীরা তখন কী করবে? তারা উৎপাদনই কমিয়ে দেয়। আর এটা বাজারে আরও ভারসাম্যহীনতা বাড়ায়।
বিভিন্ন স্তরের সরবরাহ শৃঙ্খলায় চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হওয়ার একটি বড় কারণ এ দেশের জটিল-কুটিল বিভিন্ন স্তরের সরবরাহ প্রক্রিয়া। সাধারণত পণ্যগুলো বেশ কয়েকটি হাত বদলের মধ্য দিয়ে যায়। ক্রেতার হাতে আসার আগ পর্যন্ত উৎপাদনকারী, পরিবেশক, খুচরা বিক্রেতারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন। সরবরাহ প্রক্রিয়ার প্রতিটা ধাপে নিজস্ব পরিচালনা খরচ আছে যেমন পরিবহন, মজুদকরণ এবং ছাড়াই খরচ, যার মধ্যে প্যাকেজিং খচরও আছে। খুচরা মূল্য নির্ধারণের সময় এই বাড়তি খচরগুলো ধরতে ব্যর্থ হয়। এগুলো প্রায়ই মধ্যস্থতাকীরাই বহন করে। ফলে বাজারের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
উদারহরণস্বরূপ যদি চালের মতো পণ্যের কথা ধরা হয়, যা জটিল এক সরবরাহ চক্রের মধ্য দিয়ে যায়- কৃষক, মিল মালিক, পাইকারি বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতা। চালের খুচরা মূল্য নির্ধারণের ফলে উৎপাদন ও সরবরাহের আগের পর্যায়ে যে ক্রমবর্ধমান খরচ হয়েছে, তা ধরা হয় না। পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতারা মূল্য নির্ধারণের ফলে গুটিয়ে যায়, ক্ষতি পোষানোর জন্য তখন তারা সরবরাহ কমিয়ে দেয়, মান কমিয়ে দেয়, অথবা কালোবাজারের মুখাপেক্ষী হন যেখানে মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয় না।
অনানুষ্ঠানিক বাজার এবং কালো বাজারের ইন্ধন জোগানো
মূল্য নিয়ন্ত্রণ যখন প্রকৃত বাজারকে গতিশীল করতে পারে না, তখন অসাবধানতাবশত অনানুষ্ঠানিক বাজারের বৃদ্ধি বাড়তে থাকে। সরকার-নির্ধারিত মূল্যের অধীনে মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতারা তখন কালোবাজারের দ্বারস্থ হয়। এখানে তারা উৎপাদন খরচ ও চাহিদার সঙ্গে দামের একটা সামঞ্জস্য তৈরি করে। বিশেষ করে উচ্চ-চাহিদার কিছু পণ্য- জ্বালানি তেল, চিনি এবং রান্নার তেল এগুলোর সঙ্গে যুক্ত। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য সরবরাহকারীদের প্রত্যাশিত মূল্যের চেয়ে কম হলে তারা বাজার থেকে পণ্য আউট করে ফেলে, ফলে তৈরি হয় তীব্র চাহিদা, আর এই সুযোগে তৈরি হয় কালোবাজার। সেখানে পণ্যগুলো তারা আরও বেশি দামে বিক্রি করে।
অনানুষ্ঠানিক বাজার শুধু সরকারের মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকেই দুর্বল করে না, বরং কর-রাজস্ব আদায় থেকে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করে। বৈধব্যবসার জন্যও এটি হুমকি। এটা একটা অসম অবস্থা তৈরি করে। এই বাজারগুলো থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে একদিকে যেমন পণ্যের মান নিয়েও থাকে সংশয়, অন্যদিকে ক্রেতাদের নিরাপত্তাও এতে নিশ্চিত করা যায় না। বিশেষ করে পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে এগুলো হয় মারাত্মক হুমকির।
সরবরাহ শৃঙ্খলার চাঁদাবাজি এবং অনানুষ্ঠানিক খরচ
সরকার-নির্ধারিত স্থির মূল্যের সমাধান ব্যর্থ হয় আরও একটি জটিল সমস্যার কারণে, আর তা হলো সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজি এবং অনানুষ্ঠানিক ফি। পরিববহনকারীরা, পাইকারি বিক্রেতারা, এমন কি খুচরা বিক্রেতারাও জায়গায় জায়গা নানা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়, ঘুষ ছাড়া অনেক জায়গায় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না, ফলে তাদের ব্যবসার খরচ আরও বেড়ে যায়। এই অনানুষ্ঠানিক খরচ ফল ও সবজির মতো পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি। খুচরামূল্য নির্ধারণের সময় এগুলো বিবেচনা করা হয় না।
আরেকটি জটিল সমস্যা যা নির্দিষ্ট মূল্যের সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তা হলো সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যমান ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং অনানুষ্ঠানিক ফি। পরিবহনকারী, পাইকারি বিক্রেতা এবং বাজারের বিক্রেতারা প্রায়ই ঘুষ বা সুরক্ষা অর্থের দাবির মুখোমুখি হন, যা ব্যবসা করার সামগ্রিক খরচ যোগ করে। এই অনানুষ্ঠানিক খরচ, যা ফল ও সবজির মতো পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বেশি, খুচরা মূল্য নির্ধারণের সময় বিবেচনা করা হয় না, যা সরবরাহকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য কাঠামোর মধ্যে লাভজনকভাবে কাজ করা আরও কঠিন করে তোলে। তাই অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যে এগুলো বাজারজাত করা কঠিন হয়ে পড়ে। সরবরাহকারীদের জন্য তখন এগুলো লাভজনকভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না।
এই গোপন খরচ শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে ভোক্তাদের ঘাড়ে। হয় অনানুষ্ঠানিক বাজারের উচ্চমূল্যের কারণে, না হয় আনুষ্ঠানিক বাজারে পণ্যস্বল্পতার কারণে। তা ছাড়া, পচনশীল পণ্য যেহেতু দ্রুত বাজারে পৌঁছাতে হবে, তাই চাঁদাবাজি বিলম্বের কারণেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হতে পারে, এতেও সরবরাহ কমে যেতে পারে, আর এতেও দাম হেরফের হতে পারে।
প্রশাসনিক ওভারলোড আর নিয়ন্ত্রক অদক্ষতা
পণ্যমূল্য কেবল নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, এর বাস্তবায়নও দরকার। এই বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো, উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক তদারকি ব্যবস্থা; কিন্তু বাজার মনিটর করা, বাজার অনুযায়ী দাম ঠিক করা, কেউ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি কাজ নজরদারিতে রাখার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর বহু লোকবল দরকার। প্রয়োজনীয় লোকের স্বল্পতা তাদের কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয়, যা বাজারের বিশৃঙ্খলাকে বহাল রাখে। সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা সরকার-নির্ধারিত নির্দিষ্ট দাম মেনে চলে কি না, তা নিশ্চত করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে সরকারি-তদারকি সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সামর্থ্যের অভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনিটর করতে পারেন না, যার ফলে তাদের প্রতি বিক্রেতার যেমন একদিকে থাকে আনুগত্যের অভাব, অন্য দিকে তা বাজারে একটা কারসাজি তৈরি করে।
তা ছাড়া, মূল্যস্থির কতদিনের জন্য করা হয়, তাও অনেক সময় নির্ধারিত থাকে না। এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে, বিশ্ব বাজারের অবস্থার পরিবর্তন হয়; কিন্তু দাম রয়ে যায় আগের মতো। দাম আপডেট করার প্রক্রিয়াটি অনেক সময় বিলম্ব ঘটে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এর মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হয়ে পড়ে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের অদক্ষতা উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়কেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে। নীতি-নির্ধারণের পুরো কার্যকারিতাকেই এটা প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনকে নিরুৎসাহিত করা
মূল্য নিয়ন্ত্রণ অনেক উৎপাদন ও সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে। যখন উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীরা জানবেন তারা যা খরচ করছেন, তা উঠে আসবে না তখন তারা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অথবা নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখাবে না। বিনিয়োগের এই অভাব সরবরাহ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনকারীরা পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতে অসমর্থ বা অনিচ্ছুক হলে তার ফল হবে মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিপরীত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পোলট্টি শিল্পের কথা। মুরগি ও ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ফলে পোলট্টি ফার্মের মালিকরা আরও সুদক্ষপদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালার বদলে তাদের খামার বন্ধ করার কথাও ভাবতে পারে, যার ফলে বাজারে হাঁস-মুরগি-ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। অন্যদিকে, বিনিয়োগের অভাবে নতুন পোলট্টি ফার্ম আর গড়ে উঠবে না, যার ফলে বাজারের সামগ্রিক প্রতিযোগিতা কমে যাবে। ক্ষতিটা হবে শেষ পর্যন্ত ভোক্তার।
প্রতিযোগিতামূলক আইনের মাধ্যমে বাজারের কারসাজি মোকাবিলা করা
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থির মূল্যের ওপর নির্ভর করার চেয়ে আরও কার্যকর পদ্ধতি হলো বাজারের কারসাজি এবং প্রতিযোগিতামূলক বিরোধী অনুশীলনগুলোকে মোকাবিলা করা। প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ বাজারের একচেটিয়া আচরণ এবং মূল্য নির্ধারণের সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করার জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রদান করেছিল। এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে, বিশেষ করে সরবরাহকারীদের মধ্যে যোগসাজশ বৃদ্ধি করে, একটি ন্যায্য এবং আরও প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
সরবরাহ ও চাহিদার নিশ্চয়তায় একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার চালু রাখার জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিবি)-এর বাজারের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করার অধিকার আছে। নির্দিষ্ট দামের হেরফের যারা করে তাদেরও শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি রোধসহ সরবরাহ শৃঙ্খলার বিভিন্ন স্তরে দামের কারসারি ঠেকাতে পারলে বাজারের স্বচ্ছতাও যেমন আসবে, এটা বাজারকে স্থিতিশীলও করবে।
উপসংহার
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণ বাংলাদেশের বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার টেকসই সমাধান নয়। এটা বরং সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতা বাড়ায়। প্রকৃত উৎপাদন খরচকে পাশ কাটিয়ে যায়। সরবরাহের বিভিন্ন স্তরে যে বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান, চাঁদাবাজি, অনানুষ্ঠানিক ব্যয় তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। মূল্য নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সরকারের উচিত প্রতিযোগিতামূলক আইন প্রয়োগকে শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করা। সরবরাহ শৃঙ্খলার অদক্ষতা কমানো, বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। বাজারের অস্থিতিশীলতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজীয় পণ্যের বাজার সরকার আরও স্থিতিস্থাপক ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।
লেখক: পাবলিক পলিসি অ্যাডভোকেট।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে