আমার ওপরে কেন এই হামলা: রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা
‘মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী’- পাঁচটি পাতায় যুক্ত ঐক্যের বার্তা সম্বলিত গ্রাফিতিটি পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে সরিয়ে ফেলার ঘটনায় চলছে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন। ভিউজ বাংলাদেশকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ‘আদিবাসী ছাত্র আন্দোলনের’ সক্রিয় সদস্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা।
রুপাইয়া বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐক্যের প্রতীক সেই গ্রাফিতি সংরক্ষণ। গাছের পাতাগুলোতে পাঁচটি ধর্মের সঙ্গে ‘আদিবাসী’ শব্দটির সংযোজন ঐতিহাসিক বার্তা বহন করে’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, জাতিগত, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীকও। অথচ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ কেবল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’ বার্তাটি মান্য করার বদলে পুরো গ্রাফিতিটিই সরিয়ে ফেলল। এটি আমাদের জন্য অপমানজনক এবং স্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ’।
এটি সরিয়ে ফেলার পেছনে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’-এর চাপ স্পষ্ট বলেও মনে করেন রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। বলেন, ‘তারা চরমপন্থি অবস্থান থেকে দাবি তুলেছিল, যা মূলত আদিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে। এটি রাজনৈতিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর বৈষম্যের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ারই অংশ।’
১৫ জানুয়ারির ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ভবন ঘেরাও করছিলাম। আমি মিছিলের সামনের সারিতে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’-এর সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালান। তারা লাঠি, রড এবং ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। আমাকেও পরিকল্পিতভাবে আঘাত করা হয়। আমার ধারণা, তারা আমাকে হত্যা করতেই এসেছিলেন।’
‘আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর এই আক্রমণ প্রমাণ করে যে, আমাদের বিরুদ্ধে কতটা হিংস্র মনোভাব কাজ করছে’- যোগ করেন রুপাইয়া।
মাথার আঘাত নিয়ে রুপাইয়া জানান, তিনি এখনো শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। মানসিকভাবে আরও বেশি বিপর্যস্ত।
‘এই হামলার কী ধরনের প্রতিকার চান?’- জবাবে তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের শাস্তি চাই। স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হোক। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে গ্রাফিতিটি পুনঃস্থাপন করতে হবে।’
‘আদিবাসীর’ স্বীকৃতি চেয়ে রুপাইয়া বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দটি পুনঃস্থাপন এবং আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন হামলা রোধে আদিবাসী ছাত্রদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
‘এই ঘটনার আলোকে তাদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?’- প্রশ্নে রুপাইয়া জানান, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাবি তুলে ধরারও পরিকল্পনা রয়েছে।
এটিকে শুধু আদিবাসীদের লড়াই নয়, সামগ্রিক বৈষম্যবিরোধী লড়াই হিসেবেও দেখছেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে