Views Bangladesh Logo

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত কেন?

লতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (৭ থেকে ১০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকায় অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে হয়ে গেল বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। বিডার প্রধান আশিক চৌধুরী খুবই গ্লামারাস এক প্রেজেন্টেশন্স দিয়েছেন। তার তুখোড় ইংরেজিতে চারদিকে হইচই পড়ে গেছে, কে এই আশিক চৌধুরী! এমন তো আর দেখি নাই! হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের খবর পাওয়া গেল। শোনা গেল, ২০৩৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড হয়ে যাবে। চারদিকে ধন্য ধন্য রব। অন্তর্বর্তী সরকারের বহু ব্যর্থতা এই এক বিনিয়োগ সম্মেলন দিয়ে ঢাকা পড়ে গেছে।

কিন্তু গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে দেশে শিল্প উৎপাদন কমছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন বিনিয়োগে আর উৎসাহী নন ব্যবসায়ীরা। এতদিন আমরা শুনেছি গাজীপুর-সাভারে গ্যাস সংকটে পোশাক কারখানা বন্ধ হতে। এখন চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে ইস্পাত কারখানা। প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে ছোটবড় ইস্পাত কারখানা অর্ধশত। এর ৬২ শতাংশ চট্টগ্রামে। শুধু ইস্পাত নয়; গার্মেন্ট সেক্টরেও ঢাকার পর অবস্থান চট্টগ্রামের। সংকটে পড়ে গত সাত মাসে এসব কারখানার ৫০টি বন্ধ হয়ে গেছে। আর বিনিয়োগের পথে থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থমকে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট এবং দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানায়; বিশেষত টেক্সটাইল, সিরামিক ও ইস্পাত কারখানা। এগুলো গ্যাসনির্ভর। তাই গ্যাসের সরবরাহ ঠিকমতো না পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গ্যাসের চাপ না পাওয়া এবং দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে যদি দেশীয় কারখানাই বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসলে কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন? এভাবে কারখানা বন্ধ হতে থাকলে, বিনিয়োগ কমে যেতে থাকলে দেশ সিঙ্গাপুর হবে কোন পথে?

গ্যাস-সংকট নিয়ে অনেক দিন ধরেই দেশে জোর আলোচনা চলছে। গত শীত থেকেই গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাস সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান বিগত সরকারও করেনি, বর্তমান সরকারের মধ্যেও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে রাজনৈতিক পরিবেশও অনিশ্চয়তায়। যতদিন নির্বাচিত সরকার না আসে ততদিন বিনিয়োগেরও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে না, গ্যাস সংকটেরও কোনো স্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে না। তাহলে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি না করে বিনিয়োগ সম্মেলন করে আমাদের কী লাভ?

এসব চমকপ্রদ কথাবার্তা না বলে সরকারের উচিত গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। আশংকা করা যাচ্ছে গ্যাস সংকট আগামীতে আরও বাড়বে। তাহলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য হবে মারাত্মক ক্ষতিকর। সব দিক বিবেচনা করে এই মুহূর্তে গ্যাস সংকট দূর করার বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ